বিজ্ঞাপন
default-image

২৩ মে ১৯৭১। গোলাম হেলাল মোর্শেদ খানের নেতৃত্বে সীমান্ত এলাকা থেকে মাধবপুরের দিকে রওনা হন একদল মুক্তিযোদ্ধা। বেলা দুইটার দিকে তাঁরা নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছান। কিন্তু সেদিন পাকিস্তানি সেনারা আসেনি। গোলাম হেলাল মোর্শেদ খান হতাশ না হয়ে রাতে সহযোদ্ধাদের নিয়ে সেখানেই থাকেন। সবাই বৃষ্টিতে ভেজেন। সারা রাত ঘুমাননি। সকাল হওয়ার পর পরিত্যক্ত একটি বাড়িতে বিশ্রাম নিয়ে আবার অ্যামবুশস্থলে আসেন।

বেলা আড়াইটার দিকে পাকিস্তানি সেনাদের কনভয় আসে। জিপ, লরি ও পিকআপ মিলে কনভয়ে মোট ২২টি গাড়ি ছিল। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় গাড়ি (জিপ) পার হয়ে যায়। মাইন বিস্ফোরিত হয়নি। চতুর্থটি (পিকআপ) পার হওয়ার সময় মাইন বিস্ফোরিত হয়। সেটি উড়ে গিয়ে কয়েক গজ দূরে পড়ে। দ্বিতীয় গাড়িরও একই ভাগ্য ঘটে।

এ সময় হেলাল মোর্শেদ সংকেত দিলে সহযোদ্ধাদের অস্ত্র গর্জে ওঠে। হতাহত হয় অনেক পাকিস্তানি সেনা। অক্ষত পাকিস্তানি সেনারা ছোটাছুটি করে নিরাপদ আশ্রয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই অবশ্য পাকিস্তানি সেনারা পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। তখন মুক্তিযোদ্ধারা পিছিয়ে আসেন।

গোলাম হেলাল মোর্শেদ খান ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। তাঁর পদবি ছিল লেফটেন্যান্ট। ২৫ মার্চের পর ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধে তাঁর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের যুদ্ধে তিনি আহত হন।

হেলাল মোর্শেদ একদল মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে আশুগঞ্জের দুই মাইল দক্ষিণে লালপুরে প্রতিরক্ষা অবস্থানে ছিলেন। ১৪ এপ্রিল পাকিস্তানি নৌবাহিনীর একটি বহর লালপুরের কাছে মেঘনা নদীতে অবস্থান নেয়। তারা অবতরণের স্থান পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরক্ষা অবস্থান নির্ণয়ের চেষ্টা করতে থাকে। তখন একজন মুক্তিযোদ্ধা তাঁর সংকেত বা নির্দেশ ছাড়াই উত্তেজনার বশে গুলি করে। এতে পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের প্রতিরক্ষা স্থান চিহ্নিত করে ফেলে এবং ট্যাংকের সাহায্যে প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়।

গোলাম হেলাল মোর্শেদ খান সহযোদ্ধাদের নিয়ে বিক্রমের সঙ্গে পাকিস্তানি আক্রমণ মোকাবিলা করেন। তাঁদের পাল্টা আক্রমণের প্রচণ্ডতায় পাকিস্তানি নৌবহর পিছু হটে যায়। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর স্যাবর জেট তাঁদের অবস্থানে আকাশ থেকে গোলাগুলি শুরু করে।

হেলাল মোর্শেদ চরম বিপর্যয়কর অবস্থার মধ্যেও বিচলিত হননি। সাহসের সঙ্গে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধও করেন। কিন্তু জল-স্থল-আকাশপথের ত্রিমুখী সাঁড়াশি আক্রমণে তাঁরা সেখানে টিকতে পারেননি। একপর্যায়ে তিনিসহ অনেকে আহত হন। এ অবস্থায় তাঁরা পিছু হটে যান।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান