বিজ্ঞাপন
default-image

ভোরে পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আকস্মিকভাবে আক্রমণ করল। নিমেষে সেখানে শুরু হলো যুদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দলে আছেন গোলাম মোস্তফা। তিনি ও তাঁর সহযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ মোকাবিলা করতে থাকেন। প্রচণ্ড লড়াইয়ে শহীদ হলেন কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা। আহত হলেন মোস্তফাসহ আরও কয়েকজন। এ ঘটনা ১৯৭১ সালের নভেম্বরে।

কানাইঘাট সিলেট জেলার অন্তর্গত। এর অবস্থান সুরমা নদীর তীরে, জৈন্তাপুর-জকিগঞ্জ সংযোগ সড়কে। সীমান্ত এলাকা। এখানে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের শক্ত এক প্রতিরক্ষা অবস্থান। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সের কয়েকটি দল সীমান্ত এলাকা থেকে বিভিন্ন দিক দিয়ে সিলেট অভিমুখে অগ্রসর হয়। জেড ফোর্সের প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট আসতে থাকে আটগ্রাম-চরঘাট-সিলেট অক্ষ ধরে। পথিমধ্যে কয়েকটি জায়গা থেকে পাকিস্তানি সেনাদের বিতাড়িত করে ২৫-২৬ নভেম্বর তারা পৌঁছে যায় গৌরীপুরে। সেখান থেকে কানাইঘাটের দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। মুক্তিযোদ্ধারা সুরমা নদীর উত্তর ও দক্ষিণ তীরে অস্থায়ী প্রতিরক্ষা অবস্থান নেন। ২৬-২৭ নভেম্বর ভোরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দল তাদের মূল প্রতিরক্ষা অবস্থান থেকে বেরিয়ে আকস্মিকভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ করে। সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের সামনের দুটি কোম্পানিকে প্রায় ঘেরাও করে ফেলে। তাদের অতর্কিত আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রবর্তী দল (আলফা ও ডেলটা কোম্পানি) নাজুক অবস্থায় পড়ে।

এমন অবস্থায় বিচলিত না হয়ে গোলাম মোস্তফাসহ মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ প্রতিহত করতে থাকেন। এ রকম যুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। গোলাম মোস্তফা তা-ই করতে থাকেন। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলতে থাকে। প্রচণ্ড লড়াইয়ে মুক্তিবাহিনীর বেশ কয়েকজন শহীদ হন এবং আহত হন অনেক মুক্তিযোদ্ধা। গোলাম মোস্তফা নিজেও আহত হন। পরে মুক্তিযোদ্ধাদের অপর দলের সদস্যরা লেফটেন্যান্ট ওয়াকার হাসানের (বীর প্রতীক, পরে মেজর) নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর পাল্টা আক্রমণ চালান। তাঁদের আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা পশ্চাদপসরণ করে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মেজর সারওয়ারসহ অসংখ্য সেনাসদস্য নিহত হয়। মুক্তিযুদ্ধে কানাইঘাট যুদ্ধ অন্যতম উল্লেখযোগ্য এক যুদ্ধ।

গোলাম মোস্তফা চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে। নবীন সেনা হিসেবে কর্মরত ছিলেন দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি তাতে যোগ দেন। ভারতে যাওয়ার পর পুনরায় সংগঠিত হয়ে প্রথম যুদ্ধ করেন জামালপুর জেলার কামালপুরে। পরে জেড ফোর্সের অধীনে আটগ্রাম-চারগ্রামসহ আরও কয়েক জায়গায় যুদ্ধ করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান