বিজ্ঞাপন
default-image

তখন গিয়াস উদ্দিন আহাম্মদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দলের অবস্থান ছিল কুমিল্লার হোমনায়। ওই এলাকা দিয়ে ঢাকাগামী মুক্তিযোদ্ধাদের চলাচল নিরাপদ করার জন্য সেক্টর সদর দপ্তর থেকে তাঁর কাছে নির্দেশ আসে। হোমনা থানায় মোতায়েন ছিল কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। তাদের সহযোগিতা করত থানার পুলিশ। থানার চারদিকে বাংকার এবং প্রতি বাংকারে ছিল এলএমজি। এ ছাড়া দাউদকান্দি থেকেও লঞ্চযোগে পাকিস্তানি সেনারা আসত। তবে তারা টহল দিয়ে চলে যেত।

তথ্যানুসন্ধানের পর গিয়াস উদ্দিন সহযোদ্ধাদের নিয়ে ১ জুলাই মধ্যরাতে সেখানে আকস্মিক আক্রমণ পরিচালনা করেন। তাঁরা ছিলেন অল্প কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা। তবে বেশির ভাগই সাহসী ও দুর্ধর্ষ। অস্ত্রশস্ত্রও ছিল উন্নত মানের। আক্রমণের শুরুতেই পাকিস্তানি সেনা ও পুলিশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এলএমজি দিয়ে গুলি করে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেও তারা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়।

থানায় অবস্থানরত সব পাকিস্তানি সেনা ও পুলিশ যুদ্ধে নিহত হয়। সেদিন গিয়াস উদ্দিন ও তাঁর কয়েকজন সহযোদ্ধা অসাধারণ বীরত্বের পরিচয় দেন। বিশেষত, তাঁর রণনৈপুণ্য ও শৌর্যের ফলেই পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিরোধ ভেঙে পড়ে এবং তাদের সবাই নিহত হয়।

এর কয়েক দিন পর (৬ জুলাই) গিয়াস উদ্দিন জয়পুর গ্রামে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি দলের ওপর আকস্মিক আক্রমণ চালান। দাউদকান্দি থানার অন্তর্গত মাসিমপুর বাজারের আধা মাইল পশ্চিমে জয়পুর। গুপ্তচর মারফত সেদিন সকালে তিনি খবর পান, পাকিস্তানি সেনারা দুটি লঞ্চযোগে ওই এলাকায় আসছে। খবর পেয়েই সহযোদ্ধাদের নিয়ে গোমতীর শাখানদীর পাড়ে তিনি ফাঁদ পাতেন।

সকাল ১০টায় লঞ্চ দুটি ওই শাখানদীতে আসে। তখন গিয়াস উদ্দিন ও অন্যরা একযোগে আক্রমণ করেন। এতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। পাল্টা আক্রমণ চালিয়েও তারা মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষতি করতে ব্যর্থ হয়। এরপর সেনারা লঞ্চ নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে মুক্তিযোদ্ধারা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, তাঁদের আক্রমণে ২০-২২ জন পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়েছে।

গিয়াস উদ্দিন আহাম্মদ চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ১৯ সিগন্যাল কোরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন ঢাকা সেনানিবাসে। তখন তাঁর পদবি ছিল হাবিলদার। তিনি কমান্ডো বাহিনীর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্যারাট্রুপার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঢাকা সেনানিবাস থেকে কৌশলে পালিয়ে নিজ এলাকায় গিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ২ নম্বর সেক্টরের আওতাধীন হোমনা, দাউদকান্দি ও গজারিয়া থানায় যুদ্ধ করেন। ৯ নভেম্বর দাউদকান্দির পঞ্চবটীতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে তিনি আহত হন। তাঁর বাঁ পায়ে গুলি লাগে।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান