বিজ্ঞাপন
default-image

সকালেই চারদিকে রাষ্ট্র হয়ে গেল, রংপুর থেকে আসা পাকিস্তানি সেনারা শহরের উপকণ্ঠ থেকে পালিয়ে গেছে। সারা শহরে আনন্দের ঢেউ। এরপর প্রতিরোধযুদ্ধরত ইপিআর সদস্যরা সমবেত হলেন শহরের সার্কিট হাউসে। তাঁদের একটি অংশের নেতৃত্বে খন্দকার মতিউর রহমান। ইপিআর সদস্যরা সংখ্যায় মোট ৩৯ জন। তাঁরা সবাই মিলে শহর থেকে মাইল কয়েক দূরে থাকা সেনাক্যাম্প আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিলেন। এ ঘটনা ১৯৭১ সালের ১ এপ্রিলের। ঘটেছিল বগুড়ায়।

প্রতিরোধযুদ্ধ চলাকালে ২৮ মার্চ রাতে পাশের নওগাঁ জেলা থেকে খন্দকার মতিউর রহমানসহ একদল ইপিআর সদস্য বগুড়ায় এসে স্থানীয় প্রতিরোধযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দেন। এতে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে রংপুর থেকে আসা পাকিস্তানি সেনারা ৩১ মার্চ রাতে বগুড়া থেকে পালিয়ে যায়।

এদিকে, বগুড়া শহর থেকে মাইল কয়েক দূরে আড়িয়াবাজারে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অস্ত্র ও গোলাবারুদের ডিপো। পাশে ছোট সেনাক্যাম্পে ছিল সেনাবাহিনীর একটি ইউনিট। এর কর্মকর্তাদের সবাই অবাঙালি হলেও সেনাদের বেশির ভাগ ছিল বাঙালি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সেখানকার বাঙালি সেনাসদস্যদের নিরস্ত্র করে বন্দী করা হয়। দু-তিনজন প্রতিবাদ করায় সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের গুলি করে হত্যা করা হয়। ক্যাম্পের ভেতরে ঘটনা হলেও খবরটা আর চাপা থাকে না।

আড়িয়াবাজার ক্যাম্পে অবরুদ্ধ বাঙালি সেনাদের কথা জানার পর খন্দকার মতিউর রহমান ১ এপ্রিল সেখানে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। তাঁদের সঙ্গে আরও ছিলেন স্থানীয় প্রতিরোধযোদ্ধা দলের ৫০ জন পুলিশ সদস্য ও ২০ জন অস্ত্রধারী স্বেচ্ছাসেবক। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ তাঁরা তিন দিক থেকে আড়িয়াবাজারের পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে আক্রমণ করেন। দুই পক্ষে শুরু হয় পাল্টাপাল্টি গুলি। পাকিস্তানি সেনারা অবিরাম গুলি চালিয়ে যেতে থাকে। ঘণ্টা খানেক পর খবর পেয়ে পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর বিমান আকাশ থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্য করে আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধারাও সবকিছু উপেক্ষা করে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর তাদের আক্রমণ অব্যাহত রাখেন। স্থানীয় গ্রামবাসীও মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সাহায্য করেন। তিন ঘণ্টা যুদ্ধের পর পাকিস্তানি সেনারা আত্মসমর্পণ করে। আড়িয়াবাজারের যুদ্ধে খন্দকার মতিউর রহমান যথেষ্ট বীরত্ব ও কৃতিত্বের পরিচয় দেন। সে যুদ্ধে একজন প্রতিরোধযোদ্ধা পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে শহীদ হন।

খন্দকার মতিউর রহমান চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন নওগাঁ ইপিআর উইংয়ে (বর্তমানে ব্যাটালিয়ন)। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি তাতে যোগ দেন। আড়িয়াবাজার যুদ্ধের পর তিনি যুদ্ধ করেন পাবনা জেলার কাশিনাথপুরে, পরে ৩ নম্বর সেক্টরের আশ্রমবাড়ী সাবসেক্টরে।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান