বিজ্ঞাপন
default-image

১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের বেশির ভাগ এলাকা থেকে পশ্চাদপসরণ করেছে। সীমান্তের অল্প কিছু এলাকা এখনো তাদের দখলে। এ রকমই একটি এলাকা চণ্ডীদার। সেখানে তখনো রয়ে গেছে একদল পাকিস্তানি সেনা। মরিয়া তাদের মনোভাব। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার (বর্তমানে উপজেলা) অন্তর্গত চণ্ডীদার।

ফলে সেখানে যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ল। কাজী মোরশেদুল আলমসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা রওনা দিলেন চণ্ডীদারে। তাঁরা মুখোমুখি হলেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর। মুখোমুখি হওয়া মাত্র পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাঁদের ওপর আক্রমণ শুরু করে দেয়। তাঁরা অত্যন্ত বীরত্ব ও সাফল্যের সঙ্গে সে আক্রমণ প্রতিহত করেন। দিনের আলোয় দুই পক্ষে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাদের সর্বশক্তি দিয়ে আক্রমণের ধারা অব্যাহত রাখে। কয়েক ঘণ্টা মরণপণ লড়াই করেও কাজী মোরশেদুল আলম ও তাঁর সহযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানের দিকে অগ্রসর হতে ব্যর্থ হন। এ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধকৌশল পাল্টান। পরে তাঁরা পুনরায় সংগঠিত ও কয়েকটি উপদলে বিভক্ত হয়ে নতুন করে আক্রমণ চালান।

মুক্তিযোদ্ধাদের উপদলের একটি দল সামনে থেকে আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে বিভ্রান্ত করে। আরেক দল অপর পাশ থেকে স্মোক গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ধূম্রকুণ্ডলীর সৃষ্টি করে পেছনে সরে যায়। এই সুযোগে আত্মঘাতী উপদল সৃষ্ট ধূম্রকুণ্ডলীর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওপর ঝটিকা আক্রমণ চালায়। কাজী মোরশেদুল আলমসহ কয়েকজন ছিলেন এই দলে। তিনি ও তাঁর সহযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওপর প্রচণ্ড গতিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসিকতায় শত্রুসেনাদের মনোবলে চিড় ধরে। তখন তারা কিছুটা পশ্চাদপসরণ করে নতুন জায়গায় অবস্থান নেয়। কাজী মোরশেদুল আলম ও তাঁর সহযোদ্ধারা ধাওয়া করে নতুন স্থানে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ করেন।

বিপর্যস্ত পাকিস্তানি সেনারাও মরিয়া হয়ে পাল্টা আক্রমণ করে। অমিত সাহসী কাজী মোরশেদুল আলম পাকিস্তানি সেনাদের গুলিবৃষ্টি উপেক্ষা করে কিছুটা এগিয়ে যান। খুব কাছাকাছি অবস্থান নিয়ে বিপুল বিক্রমে যুদ্ধ করতে থাকেন। একপর্যায়ে হঠাত্ গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সহযোদ্ধারা তাঁকে উদ্ধার করার আগেই নিভে যায় তাঁর জীবনপ্রদীপ।

যুদ্ধ শেষে সহযোদ্ধারা শহীদ মোরশেদুল আলমকে সমাহিত করেন কুল্লাপাথরে।

কাজী মোরশেদুল আলম ১৯৭১ সালে উচ্চমাধ্যমিকের শেষবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এপ্রিল মাসের শেষ দিকে ভারতে যান। প্রশিক্ষণ নিয়ে যোগ দেন ২ নম্বর সেক্টরে। পরে তাঁকে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর নবম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান