বিজ্ঞাপন
default-image

জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত বাহাদুরাবাদ নৌবন্দর। ১৯৭১ সালে সেখানে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ঘাঁটি। প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত ছিল ৩১ বালুচ রেজিমেন্ট।

৩১ জুলাই মুক্তিবাহিনীর একটি দল (তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট) বাহাদুরাবাদ ঘাটে আক্রমণ করে। মুক্তিবাহিনীর এই দলে ছিলেন করম আলী হাওলাদার। তিনি ছিলেন মূল আক্রমণকারী দল ডি কোম্পানিতে এবং একটি প্লাটুনের নেতৃত্বে।

তাঁরা সেদিন নির্ধারিত সময়ে (শেষ রাতে) ঘাটের রেললাইনের জংশন পয়েন্টে অবস্থান নেন। এরপর সবার আগে করম আলী হাওলাদার তাঁর দল নিয়ে আক্রমণের জন্য এগিয়ে যান। তাঁর ওপর দায়িত্ব ছিল জেনারেটরবাহী রেলওয়াগন ও এর আশপাশের ছোট ছোট বাংকারে আক্রমণ করে সেগুলো ধ্বংস করা।

ঘটনাচক্রে তখন ওয়াগনের চারদিকের বাংকারে পাকিস্তানি সেনারা ছিল না। তারা লাইনের অপর পাশে ডিউটি শুরু করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল। এই সময় লাইনের ওপর একটি যাত্রীবাহী রেলের সানটিং চলছিল। সানটিং ইঞ্জিন সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে করম আলী হাওলাদার সহযোদ্ধাদের নিয়ে এগিয়ে যান এবং প্রথমে জেনারেটরবাহী রেলওয়াগন, পরে সানটিং ইঞ্জিনের ওপর রকেট নিক্ষেপ করেন।

করম আলী হাওলাদারের ছোড়া রকেট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। প্রথম রকেটের আঘাতেই জেনারেটরটি অকেজো হয়ে যায়। গোটা এলাকা অন্ধকারে ঢেকে যায়। গোলার শব্দ পেয়ে তাঁদের অন্যান্য উপদলও আক্রমণ শুরু করে। আচমকা আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা হকচকিত হয়ে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যে নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে তারাও পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। কিন্তু অতর্কিত আক্রমণে বেশির ভাগ পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। বাঁচার জন্য অনেকে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সাঁতার না জানায় তারা নদীতে ডুবে মারা যায়। পরে করম আলী হাওলাদার রকেট লঞ্চার থেকে রকেট ছুড়ে নদীতে থাকা সব নৌযান—বার্জ, পন্টুন, টাগ ও লঞ্চ ধ্বংস করেন। সেগুলো রকেটের আঘাতে ফুটো হয়ে পানিতে ডুবে যায়।

করম আলী হাওলাদার চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে। পদবি ছিল নায়েব সুবেদার। ১৯৭১-এ কর্মরত ছিলেন সৈয়দপুর সেনানিবাসে অবস্থিত তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। মার্চে এই রেজিমেন্টকে সম্ভাব্য ভারতীয় আগ্রাসনের কথা বলে সেনানিবাসের বাইরে মোতায়েন করা হয়। তাঁর কোম্পানি গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ীতে ছিল।

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে করম আলী হাওলাদার যুদ্ধে যোগ দেন। ২৮ মার্চ রংপুর থেকে আসা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে তিনি অ্যামবুুশ করেন। তাঁদের আক্রমণে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যান। পরে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সের অধীনে যুদ্ধ করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান