বিজ্ঞাপন
default-image

মুক্তিযুদ্ধকালে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী ও চর রাজীবপুর এলাকা নিয়ে ছিল মুক্তিবাহিনীর মানকারচর সাবসেক্টর। এ সাবসেক্টরের অধিনায়ক ছিলেন এম হামিদুল্লাহ খান।

রৌমারীতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কখনোই তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। এম হামিদুল্লাহ খানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা সুসংহতভাবে এ এলাকায় অবস্থান নিয়েছিলেন। এ এলাকায় বেশ কয়েকটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এর মধ্যে চিলমারীর যুদ্ধ অন্যতম। এ যুদ্ধ সংঘটিত হয় অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি। এর ঘটনা শোনা যাক তাঁর বয়ান থেকে:

‘অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে চিলমারী আক্রমণ পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়। সিদ্ধান্ত হয় আক্রমণে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধা ৩৫ ভাগ নেওয়া হবে ভারতে প্রশিক্ষণ নেওয়াদের মধ্য থেকে। ৪০ ভাগ সেক্টরের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় যাঁরা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে থেকে। বাকি ২৫ ভাগ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, যাঁরা নিজ উদ্যোগে অস্ত্র সংগ্রহ করে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে থাকবে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর একটি প্লাটুন।

‘নির্ধারিত দিন ভোর চারটায় ২৬ মিমি সংকেত পিস্তলের মাধ্যমে আমি আকাশের দিকে গুলি করে যুদ্ধ শুরুর যুগপত্ সংকেত দিই। মুহূর্তেই প্রলয়কাণ্ড ঘটে। গোলাগুলিতে সমগ্র চিলমারীর আকাশ রক্তিম হয়ে ওঠে। চারদিকে নারী-পুরুষের ক্রন্দন রোল পড়ে। ট্রেঞ্চে এবং বাংকারে শত্রুবাহিনী এবং তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে একযোগে গোলাগুলি চলে।

‘এ সময় আমি রিইনফোর্সমেন্ট এবং গাইডসহ এক স্থান থেকে আরেক স্থান পর্যবেক্ষণের কাজে বেরিয়ে পড়ি। কাভারের আড়াল থেকে যুদ্ধ করার চেয়ে এ রকম মুভমেন্টে বিপদের আশঙ্কা বেশি। আমার জীবনে এমন উত্তেজনাকর, উন্মাদনাপূর্ণ, বিশৃঙ্খলা এবং অনিশ্চিত পরিস্থিতি এর আগে কখনো আসেনি। এ অবস্থায় সম্পূর্ণ স্থিরচিত্ত থেকে নির্লিপ্তভাবে সহযোদ্ধাদের মনের সাহস বাড়িয়ে তুলতে অগ্রসর হতে হবে, এটাই স্মরণে রেখেছি।

‘সকাল ছয়টার আগেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী ইপিসিএএফ ও রাজাকাররা অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ শুরু করে। পাকিস্তানিদের একমাত্র ওয়াপদা ঘাঁটি ছাড়া সব ঘাঁটির পতন হয় ছয়টার মধ্যেই। চিলমারীর বেশির ভাগ এলাকা আমাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।’

এম হামিদুল্লাহ খান চাকরি করতেন পাকিস্তানি বিমানবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন ঢাকায়। মে মাসে ঢাকা থেকে পালিয়ে ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। পরে তাঁকে মানকারচর সাবসেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৫ নভেম্বরের পর থেকে ১১ নম্বর সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

স্থলযুদ্ধের অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও এম হামিদুল্লাহ খান অত্যন্ত বিচক্ষণতা, দক্ষতা ও সাহসের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে মোকাবিলা করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান