বিজ্ঞাপন
default-image

মুক্তিযুদ্ধকালে অমরখানা ও জগদলহাটে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী ছিল মুখোমুখি অবস্থানে। জুলাই মাস থেকে প্রায় দিন এখানে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। কখনো পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের, কখনো মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ করতেন। তখন দুই পক্ষে তুমুল যুদ্ধ হতো। তবে কেউ কাউকে নিজেদের অবস্থান থেকে সরাতে পারেনি। এভাবে যুদ্ধ চলে নভেম্বর মাসের প্রথমার্ধ পর্যন্ত।

এক দল (প্রায় তিন কোম্পানি) মুক্তিযোদ্ধা পাকিস্তানি অবস্থানে চূড়ান্ত আক্রমণের জন্য ২২ নভেম্বর রাতে সমবেত হন চাওয়াই নদীর পূর্ব তীরে। রাত দুইটায় তাঁরা আক্রমণ চালান। এমন আক্রমণের জন্য পাকিস্তানিরা প্রস্তুতই ছিল। সঙ্গে সঙ্গে গর্জে ওঠে তাদের আর্টিলারি। শুরু হয় নিরাপদ বাংকার থেকে অবিরাম গুলিবর্ষণ।

এম সদর উদ্দিনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে পাকিস্তানি প্রতিরক্ষার মধ্যে ঢুকে পড়েন। একনাগাড়ে দুই-আড়াই ঘণ্টা ধরে চলে যুদ্ধের তাণ্ডবলীলা। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমণের মুখে পাকিস্তানিরা অমরখানা থেকে জগদলহাটে পালিয়ে যায়। ভোরের আগেই মুক্ত হয়ে যায় অমরখানা।

অমরখানা দখলের পর মুক্তিযোদ্ধারা প্রস্তুতি নেন জগদলহাট আক্রমণের। সেখানে তাঁরা আক্রমণ চালান। এ যুদ্ধে রিইনফোর্সমেন্ট হিসেবে অংশ নেন মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব আলম। তিনি তাঁর বইয়ে লিখেছেন, ‘সকাল নটার দিকে এলেন সদরুদ্দিন সাহেব। একটা জিপে চড়ে। চোখ লাল। অবিন্যস্ত অগোছালো চেহারা। কাঁধে স্টেনগান। বোঝাই যায় সারা রাত ঘুমাননি। ফ্রন্ট আর রেয়ার, সম্ভবত এই নিয়েই কেটেছে তাঁর সারা রাত।

‘...পাক বাহিনী প্রায় ছয় মাস অনেকটা সুইসাইড স্কোয়াডের মতো মাটি কামড়ে পড়ে ছিল এ জায়গাটায় (অমরখানা)। আক্রমণ প্রতি-আক্রমণে মুখর ছিল জায়গাটা। বিচ্ছিন্নভাবে বহুবার আক্রমণ করা হয়েছে। কিন্তু তাদের সরানো যায়নি। কখনো এখান থেকে উন্মত্ত হাতির মতো একরোখা ভঙ্গিতে পাক বাহিনী এগিয়ে গেছে ভজনপুর-দেবনগর মুক্তিফৌজের অবস্থানের দিকে। কখনো অমরখানায় ভারতীয় অবস্থানের দিকে।...শতসহস্র কামান-মর্টারের গোলা বর্ষিত হয়েছে তাদের ওপর। এর মধ্যেও টিকে ছিল ওরা।’

এম সদর উদ্দিন চাকরি করতেন পাকিস্তানি বিমানবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন ঢাকা এয়ার বেসে। তখন তাঁর পদবি ছিল স্কোয়াড্রন লিডার। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ১৪ মে ভারতে গিয়ে যুদ্ধে যোগ দেন। পরে তাঁকে ভজনপুর সাবসেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

স্থলযুদ্ধের অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও এম সদর উদ্দিন অত্যন্ত বিচক্ষণতা, দক্ষতা ও সাহসের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে মোকাবিলা করেন। তাঁর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা অ্যামবুশ, রেইড, ডিমোলিশন, আকস্মিক আক্রমণসহ নানা ধরনের অপারেশন করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে বিপর্যস্ত করতে সক্ষম হন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান