বিজ্ঞাপন
default-image

বাংলাদেশের ভেতরে প্রাথমিক অবস্থান থেকে রাতে আশরাফুল হকসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা রওনা হন লক্ষ্যস্থল অভিমুখে।

তাঁরা আটগ্রাম ডাকবাংলোতে আক্রমণ করবেন। সিলেট জেলার জকিগঞ্জ থানার অন্তর্গত আটগ্রাম। মুক্তিযুদ্ধকালে সেখানে সরকারি ডাকবাংলোতে ছিল পাকিস্তানি সেনা, ইপিসিএএফ ও তাদের সহযোগী কিছু রাজাকার। সব মিলিয়ে ৫৫-৬০ জন।

রাত একটায় মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল অবস্থান নেয় কারাবাল্লা গ্রামে। বাকি দুই দল স্রোতস্বিনী কুশিয়ারা নদী অতিক্রম করে রাত যখন দুইটা, তখন একটি দল ডান দিকে এবং অপর দল বাঁ দিকে এগিয়ে যায়। আশরাফুল হক তাঁর দল নিয়ে ডান দিকে আঁকাবাঁকা পথ ধরে হেঁটে একসময় নিঃশব্দে এবং নির্বিঘ্নেই পৌঁছান লক্ষ্যস্থল ডাকবাংলোর কাছে। জিরো আওয়ার অর্থাত্ আক্রমণের নির্ধারিত সময় ছিল রাত চারটা। তার আগেই তাঁদের সব প্রস্তুতি শেষ হয়।

ভারত থেকে দূরপাল্লার গোলাবর্ষণ শেষ হওয়ামাত্র আশরাফুল হক সহযোদ্ধাদের নিয়ে প্রচণ্ড আক্রমণ শুরু করেন। অন্যান্য দলও একই সময় আক্রমণ শুরু করে। গুলির খই ফুটতে থাকে ডাকবাংলো ঘিরে।

প্রবল আক্রমণে পাকিস্তানি সেনা এবং ইপিসিএএফরা দিশাহারা হয়ে পড়ে। রাজাকাররা শুরুতেই পালিয়ে যায়। পাকিস্তানি সেনা এবং ইপিসিএএফরা মরিয়া হয়ে আক্রমণ প্রতিরোধ করেও ব্যর্থ হয়। তিন ঘণ্টা পর তাদের সেই প্রতিরোধ ভেঙে পড়ে। এরপর তারা রণেভঙ্গ দিয়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু এর মধ্যেই নিহত হয় তাদের অনেকে। যুদ্ধ শেষে মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে শত্রুদের ১৮টি মৃতদেহ পান। এ ঘটনা ১৯৭১ সালের ২২ সেপ্টেম্বরের।

আটগ্রাম ডাকবাংলোর যুদ্ধ ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিরাট এক সাফল্য। অবশ্য এই সাফল্য ছিনিয়ে আনতে গিয়ে আটজন মুক্তিযোদ্ধাও শহীদ হন। আর আহত হন আশরাফুল হকসহ সাতজন।

যুদ্ধ শেষ হওয়ার আধা ঘণ্টা বা এর কিছু আগে তাঁর কোমরে শেলের স্প্লিন্টার লাগে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। সহযোদ্ধারা তাঁকে দ্রুত পাঠিয়ে দেন ভারতে। সেখানে তাঁর চিকিত্সা হয় প্রথমে গুয়াহাটি হাসপাতালে, এরপর উন্নত চিকিত্সার জন্য ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়। সুস্থ হয়ে ৩ ডিসেম্বর তিনি পুনরায় যুদ্ধে যোগ দেন।

আশরাফুল হক ১৯৭১ সালে রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি তাতে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যান। প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধ করেন ৪ নম্বর সেক্টরের জালালপুর সাবসেক্টরসহ সিলেটের বিভিন্ন জায়গায়। যুদ্ধে তিনি বরাবর পুরোভাগে থাকতেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান