বিজ্ঞাপন
default-image

২২ নভেম্বর ১৯৭১। সিলেটের কানাইঘাট এলাকা। অদূরে সুরমা নদী। এর দক্ষিণ তীরে গৌরীপুর। সেখানেই সেদিন অবস্থান নিল মুক্তিবাহিনীর একটি অগ্রবর্তী দল। এই দলে আছেন মুক্তিযোদ্ধা মো. আশরাফ আলী খান। তিনি হেভি মেশিনগানের চালক।

কানাইঘাটে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের আলফা কোম্পানি। তারা হঠাৎ প্রতিরক্ষা অবস্থান ছেড়ে গৌরীপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ করে। অতর্কিত এই আক্রমণে মুক্তিবাহিনীর অবস্থান বেশ নাজুক হয়ে পড়ে। প্রাথমিক বিপর্যয় কাটিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা সাহস ও দৃঢ়তার সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ প্রতিহত করতে থাকেন। চারদিকে গোলাগুলির তীব্র শব্দ। বারুদের গন্ধ। আর্তনাদ আর চিৎকার। আশরাফ আলী বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন। মাঝেমধ্যে দেখছেন সহযোদ্ধাদের শহীদ ও আহত হওয়ার দৃশ্য। ক্রমে মুক্তিবাহিনীর হতাহতের সংখ্যা বেড়ে যেতে থাকে। একপর্যায়ে তাঁদের আলফা কোম্পানির কমান্ডার ক্যাপ্টেন মাহবুব শহীদ হন। তিনি শহীদ হলে কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করতে থাকেন লেফটেন্যান্ট লিয়াকত। একপর্যায়ে তিনিও শত্রুর গুলিতে আহত হন। আশরাফ আলী নিজেও শত্রুর গুলিতে গুরুতরভাবে আহত হন। তাঁর বুকে লাগে দুটি গুলি।

সেদিন গৌরীপুরে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের ক্ষয়ক্ষতি উপেক্ষা করে দৃঢ়তার সঙ্গে শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ প্রতিহত করেন। মুক্তিযোদ্ধারা যে গতানুগতিক সম্মুখযুদ্ধেও দক্ষ, সেদিন তাঁরা সেটা তাঁদের নিজেদের শৌর্যবীর্য ও ত্যাগের মাধ্যমে প্রমাণ করেন। তাঁদের সাহস, মনোবল, বীরত্ব ও রণনৈপুণ্যের কাছে পাকিস্তানি সেনারা হার মানতে বাধ্য হয়। পাকিস্তানি সেনারা গৌরীপুর থেকে পালিয়ে আবার তাদের কানাইঘাট প্রতিরক্ষা অবস্থানে যায়।

আশরাফ আলী খান প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেনা ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ মধ্যরাতে যশোর সেনানিবাস আক্রান্ত হলে তাঁরা সেখান থেকে বেরিয়ে চৌগাছায় মিলিত হন এবং মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।

আশরাফ আলী খান সিলেটের গৌরীপুর ছাড়াও কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার কোদালকাটি ও কামালপুরের যুদ্ধে (৩১ জুলাই) অংশ নেন। গৌরীপুরে চলা যুদ্ধের একপর্যায়ে তিনি আহত হন। সহযোদ্ধারা আশরাফ আলী খানকে উদ্ধার করে ভারতে পাঠিয়ে দেন। সেখানে তিনি সুস্থ হন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান