বিজ্ঞাপন
default-image

১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসের প্রথম দিক। বৃহত্তর বরিশাল জেলার ঝালকাঠি, নলছিটি ও রাজাপুর এলাকায় যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধারা যৌথভাবে ভান্ডারিয়া থানা আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। এরপর মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি দল ঝালকাঠির গাবখান চ্যানেলের তীরে সেহাঙ্গল গ্রামে মিলিত হয়। একটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন আলিমুল ইসলাম (ওরফে জহিরুল ইসলাম)।

মুক্তিযোদ্ধাদের সেহাঙ্গল গ্রাম থেকে ভান্ডারিয়া থানা আক্রমণে যাওয়ার কথা ছিল। নির্দিষ্ট দিন (তারিখ জানা যায়নি) তাঁরা আক্রমণের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন। খবর আসে, গাবখান চ্যানেলের কাউখালী প্রান্ত থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি গানবোট সেহাঙ্গলের দিকে এগিয়ে আসছে। ফলে আলিমুল ইসলামসহ মুক্তিযোদ্ধারা ভান্ডারিয়ায় যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেন। তাঁরা দ্রুত অবস্থান নেন সেহাঙ্গল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশপাশে। গানবোটটি তাঁদের অবস্থানের কাছে আসামাত্র তাঁরা গানবোট লক্ষ্য করে একটি দুই ইঞ্চি মর্টার ছোড়েন। নিখুঁত নিশানায় সেটি গানবোটে পড়ে, কিন্তু সেটি বিস্ফোরিত হয়নি। এরপর পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের পাল্টা আক্রমণ করে।

পাকিস্তানিরা গানবোট থেকে একের পর এক শেল ছোড়ে। সেখানে ছিল অনেক খেজুরগাছ। শেলের আঘাতে কয়েকটি বড় খেজুরগাছ ভেঙে পড়ে। একটির ভাঙা অংশ একজন মুক্তিযোদ্ধার গায়ের ওপর পড়ে। তিনি সঙ্গে সঙ্গে মারা যান। এ ছাড়া শেলের স্প্লিন্টারের আঘাত ও গুলিতে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর তীব্র আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকে ছত্রভঙ্গ হয়ে পেছনে চলে যান। আকস্মিক এই বিপর্যয়ে আলিমুল ইসলাম মনোবল হারাননি, বিচলিতও হননি। তাঁর দলের সহযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে মাটি কামড়ে নিজেদের অবস্থানে থেকে বিপুল বিক্রমে পাকিস্তানি আক্রমণ মোকাবিলা করেন।

দুই পক্ষে তুমুল যুদ্ধ চলতে থাকে। এর মধ্যে ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধারাও পুনরায় সংগঠিত হয়ে আক্রমণে অংশ নেন। এতে মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তি বৃদ্ধি হয়। তাঁরা সবাই সাহসের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন পাল্টা তীব্র আক্রমণের মুখে পাকিস্তানিরা আর টিকতে পারেনি। একপর্যায়ে বেশ ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে তারা পিছু হটে পালিয়ে যায়। এদিন যুদ্ধের একপর্যায়ে আলিমুল ইসলামও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ছোড়া শেলের স্প্লিন্টারের আঘাতে আহত হন।

আলিমুল ইসলাম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আর্টিলারি রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭১ সালে তাঁর ইউনিটের অবস্থান ছিল ঢাকা সেনানিবাসে। জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি থেকে তিনি আড়াই মাসের ছুটিতে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাতে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ৯ নম্বর সেক্টরের টাকি সাবসেক্টর এলাকায় যুদ্ধ করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান