বিজ্ঞাপন
default-image

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মুক্তিবাহিনীর নৌ-মুক্তিযোদ্ধারা কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা অনুসারে আগস্ট মাসে একযোগে কয়েকটি সফল অপারেশন পরিচালনা করেন। এতে পাকিস্তানি সরকারের ভিত কেঁপে ওঠে। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে হইচই পড়ে যায়। এই অভিযানের সাংকেতিক নাম ছিল ‘অপারেশন জ্যাকপট’।

এরপর নৌ-মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশ থেকে ভারতে ফিরে যান। কিছুদিন পর তাঁরা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে আবার বাংলাদেশে রওনা হন। আমিন উল্লাহ শেখের নেতৃত্বে ২৬ জনের একটি দল অক্টোবর মাসের শেষে চাঁদপুরে পৌঁছান।

এবার আগের মতো কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা ছিল না। কোনো নির্দিষ্ট এলাকা বা সময় বেঁধে দেওয়া হয়নি। দলনেতারা সহযোদ্ধাদের সঙ্গে আলোচনা করে টার্গেট নির্ধারণ করতেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে আমিন উল্লাহ শেখরা চাঁদপুরে অনেকগুলো অপারেশন করেন। এর মধ্যে বার্মা ইস্টার্ন (বর্তমানে মেঘনা) কোম্পানির তেলের ডিপো, এমভি লোরেম, এমভি স্বামী, এমভি লিলিসহ চীনা পতাকাবাহী জাহাজ ও পাকিস্তানি নৌবাহিনীর গানবোট ধ্বংস উল্লেখযোগ্য।

৩০ অক্টোবর রাতে তাঁরা দুটি দলে বিভক্ত হয়ে একই সময় দুটি অপারেশন করেন। আমিন উল্লাহ শেখ পরিকল্পনা করেছিলেন ওই রাতে তাঁরা চাঁদপুরের ভাটিতে নীলকমলের কাছে অপারেশন করবেন। সেখানে রাতে পাকিস্তানি সেনা ও নৌবাহিনীর কয়েকটি গানবোট নোঙর করা থাকত।

এদিকে ডাকাতিয়া নদীর লন্ডন ঘাটে আমেরিকান পতাকাবাহী এমভি লোরেমও সেদিন নোঙর করা ছিল। জাহাজটি পাকিস্তানিদের জন্য খাদ্য ও সমরাস্ত্র বহন করে সেখানে আসে। এ খবর আমিন উল্লাহ শেখ সে দিনই জানতে পারেন। তিনি সহযোদ্ধাদের সঙ্গে আলোচনা করে একই দিন ওই জাহাজেও অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেন।

তাঁর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয় নীলকমলের কাছে পাকিস্তানি গানবোট ধ্বংসের অভিযান। অপর দল এমভি লোরেম জাহাজ ধ্বংস করে। নীলকমলে নিরাপত্তাব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত মজবুত। এরই মধ্যে সেদিন তাঁর দুঃসাহসী সহযোদ্ধারা সঙ্গে মাইন লাগিয়ে পাকিস্তানি নৌবাহিনীর একটি গানবোট ডুবিয়ে দেন।

দুর্ধর্ষ নৌ-মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ পাকিস্তানিরা কঠোর নিরাপত্তাবলয় তৈরি করেও প্রতিরোধ করতে পারেনি। অন্যদিকে লন্ডন ঘাটে ডুবে যাওয়া ‘এমভি লোরেম’ স্বাধীনতার পর তিন দশক ওই অভিযানের স্মৃতি বহন করে। তখন পর্যন্ত সেটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

আমিন উল্লাহ শেখ পাকিস্তানি নৌবাহিনীতে ইলেকট্রিক আর্টিফিসার (ইএ) পদে চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালে ফ্রান্সের তুঁল নৌঘাঁটিতে সাবমেরিনার হিসেবে প্রশিক্ষণে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ৩১ মার্চ আরও সাতজন বাঙালি সাবমেরিনারের সঙ্গে তুঁল থেকে পালিয়ে অনেক বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে ভারতে যান।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান