বিজ্ঞাপন
default-image

মুখোমুখি মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। মধ্যরাতে শুরু হলো প্রচণ্ড রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধারা সংখ্যায় এক কোম্পানির মতো। ৯ নম্বর প্লাটুনে আছেন আবুল হাশেম। তাঁর দলনেতা সুবেদার আশরাফ আলী খান (বীর বিক্রম)। পাকিস্তানি সেনাদের প্রবল প্রতিরোধ উপেক্ষা করে তাঁরা ভোরবেলা দখল করলেন বিরাট এক এলাকা। পরদিন রাতে সেখানে আবার শুরু হলো প্রচণ্ড যুদ্ধ। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অতর্কিতে পাল্টা আক্রমণ করে বসে। এ ঘটনা ঘটেছিল আজমপুরে ১৯৭১ সালের ১ ডিসেম্বরের শেষ রাতে।

নভেম্বরের শেষ দিক থেকে বাংলাদেশের সর্বত্র শুরু হয়ে যায় সর্বাত্মক যুদ্ধ। সীমান্ত এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি দল সমবেত হয় আখাউড়ার চারদিকে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্তর্গত আখাউড়া ভৌগোলিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। রেলওয়ে জংশন। আখাউড়ার পার্শ্ববর্তী আজমপুরে অবস্থান নেয় নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের চার্লি কোম্পানি।

আজমপুর রেলস্টেশনে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত এক প্রতিরক্ষা অবস্থান। মুক্তিযোদ্ধারা ৩০ নভেম্বর মধ্যরাতে সেখানে আক্রমণ চালান। পাকিস্তানি সেনারা পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধারা সব বাধা বীরত্বের সঙ্গে মোকাবিলা করে আজমপুর রেলস্টেশন ও আশপাশের এলাকা ভোর হওয়ার আগেই দখল করে নেন। পাকিস্তানি সেনারা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে পিছু হটে যায়।

১ ডিসেম্বর শেষ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সেখানে পাল্টা আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণ এতটা অপ্রত্যাশিত ছিল যে মুক্তিযোদ্ধারা বেশ নাজুক অবস্থার শিকার হন। আবুল হাশেমসহ তাঁর সহযোদ্ধারা বিপুল বিক্রমে যুদ্ধ করেও দখল করা এলাকা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে ব্যর্থ হন। এ সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গুলিতে তাঁর প্লাটুন কমান্ডার শহীদ হলে তাঁদের প্রায় ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। তখন আবুল হাশেম সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে প্লাটুনের হাল ধরেন। কিন্তু পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণ এত প্রচণ্ড ছিল যে তাঁরা কৌশলগত কারণে পিছু হটে যান। পরদিন মুক্তিযোদ্ধারা আরও কয়েকটি দলের সম্মিলিত শক্তিতে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে চূড়ান্তভাবে আজমপুর রেলস্টেশন এলাকা পুনর্দখল করে নেন।

আবুল হাশেম চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানের শিয়ালকোটে। ফেব্রুয়ারি মাসে ছুটিতে বাড়িতে এসে তিনি আর চাকরিতে যোগ দেননি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তাতে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধ চলাকালে কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকায় বিভিন্ন অপারেশনে অংশ নেন। এ পর্যায়ে তাঁর উল্লেখযোগ্য অপারেশন কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত জাঙ্গালিয়া বিদ্যুেকন্দ্র ধ্বংস। পরে যুদ্ধ করেন নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধীনে।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান