বিজ্ঞাপন
default-image

বানার নদের পারের এক স্থানে ওত পেতে আছেন একদল মুক্তিযোদ্ধা। তাঁদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সুবেদার আবুল বশর। তাঁরা খবর পেয়েছেন, নদীপথে লঞ্চে পাকিস্তানি সেনারা আসবে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের দুর্ভাগ্য, পাকিস্তানি সেনাদের কয়েকজন এদেশীয় দোসর তাঁদের অবস্থান ও গতিবিধি আগে থেকেই গোপনে পর্যবেক্ষণ করছিল। তারা মুক্তিবাহিনীর অবস্থান, সংখ্যা ও অস্ত্রশস্ত্র সম্পর্কে পাকিস্তানি সেনাদের কাছে খবর পাঠিয়ে দেয়। খবর পেয়ে তারা সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা কার্যক্রম গ্রহণ করে। এ ঘটনা ১৯৭১ সালের জুলাইয়ের। ঘটেছিল নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলায়।

পাকিস্তানি সেনারা সাধারণত লঞ্চযোগে যাতায়াত করত। ১৪ জুলাই তারা অন্য কায়দায় এল। এবার তারা লঞ্চ ছাড়াও ছোট ছোট দেশি নৌকায় করে আসে। লঞ্চগুলো ছিল নৌকার বেশ পেছনে। নৌকাগুলো যখন ওই জায়গা অতিক্রম করছিল, তখন মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অন্য কারও না হলেও মমতাজ নামের একজনের সন্দেহজনক মনে হয় নৌকাগুলোর গতিবিধি। তিনি একটি নৌকাকে থামানোর নির্দেশ দেন। আর ঠিক তখনই পাকিস্তানি সেনারা নৌকা থেকে গুলি করতে শুরু করে। মমতাজ তাদের গুলিতে সঙ্গে সঙ্গে শহীদ হন। এর মধ্যেই পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের পেছন থেকে ঘেরাও করে ফেলে এবং তাদের আক্রমণে বেশ কজন মুক্তিযোদ্ধা হতাহত হন।

দলনেতা আবুল বশর যখন ঘটনা বুঝতে পারেন, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। আর শত্রুরাও তাঁদের চেয়ে সংখ্যায় অনেক বেশি। এ অবস্থায় লড়াই করার অর্থ নিশ্চিত মৃত্যু। কৌশলগত কারণে পশ্চাদপসরণ করাই বরং শ্রেয়। কিন্তু এ জন্য প্রয়োজন নিখুঁত কাভারিং ফায়ার। উপায়ান্তরহীন হয়ে দলনেতা বশর নিজেই এ দায়িত্ব নিলেন। ‘শেষ ব্যক্তি, শেষ গুলি’ পর্যন্ত লড়াই করার জন্য তিনি মনস্থির করলেন। একসময় গুলি এসে লাগে তাঁর পেটে। গুলির আঘাতের জায়গায় গায়ের জামা পেঁচিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে গেলেন অনেকক্ষণ। কিন্তু রক্তক্ষরণে তাঁর শরীর ক্রমেই অসাড় হয়ে পড়ে। হলুদের খেতে পড়ে থাকে দ্রোহী নির্ভীক যোদ্ধা আবুল বশরের প্রাণহীন দেহ। এ যুদ্ধে তিনি ছাড়াও শহীদ হন ছয়-সাতজন। আহত হন বেশ কয়েকজন। পাকিস্তানি সেনাদেরও বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়।

আবুল বশর ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একটি প্লাটুনের সুবেদার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন। ৩ নম্বর সেক্টরের বিভিন্ন স্থানে তিনি যুদ্ধ করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান