বিজ্ঞাপন
default-image

ফেনী জেলার পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া সমন্বয়ে বিলুনিয়া। তিন দিকে ভারতের সীমান্ত। ১৯৭১ সালের ৪ নভেম্বর সকাল থেকে বিলুনিয়ায় কয়েক দিন ধরে একটানা যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর কয়েকটি দল অংশ নেয়।

৪ নভেম্বর সকালে চিথলিয়ার দিক থেকে রেলট্রলিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি টহলদল এগিয়ে আসে।

আবুল কালাম আজাদের সহযোদ্ধাদের আক্রমণে রেলট্রলি ধ্বংস ও টহলদলের সব পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। শব্দ শুনে পাকিস্তানি সেনারা গোলাগুলি শুরু করে। এরপর যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। পাকিস্তানি সেনারা শেলিং ও ফায়ারিং অব্যাহত রাখে। আবুল কালাম আজাদসহ মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা জবাব দেন।

পরদিনও শেলিং ও ফায়ারিং চলে। আক্রমণ ও প্রতি-আক্রমণ গড়ায় তৃতীয় দিনে। পরশুরামে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনারা চিথলিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের বা পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু পালানোর পথ ছিল রুদ্ধ। সেদিন বিকেলে পাকিস্তানি বিমান নিচু দিয়ে উড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানে ব্যাপক বোমাবর্ষণ করতে থাকে। এতে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষয়ক্ষতি বেড়ে যায়। জনপদেরও অনেক ক্ষতি হয়। চারদিকে দাউ দাউ আগুন জ্বলতে থাকে।

আবুল কালাম আজাদসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা এতে বিচলিত হননি। তাঁদের কারও কাছে ছিল এলএমজি, কারও কাছে এসএমজি। আজাদের কাছে ছিল এলএমজি। তাঁরা শেষরক্ষা হিসেবে তাঁদের কাছে থাকা অস্ত্রগুলোই বিমান আক্রমণ প্রতিরোধে ব্যবহার করেন।

বিমানগুলো একবার তাঁদের এলাকায় গোলাগুলি করে যাওয়ার পর তাঁরা অপেক্ষায় থাকেন আবার কখন সেগুলো ফিরে আসে। বেশিক্ষণ দেরি করতে হয়নি। বিমানগুলো খুব নিচ দিয়ে তাঁদের দিকে উড়ে আসে। অস্ত্রের গুলির আওতায় আসামাত্র গর্জে ওঠে আবুল কালাম আজাদের এলএমজি ও তাঁর সহযোদ্ধাদের অস্ত্র।

দুটি বিমান উড়ে যায়। একটি ফিরে যেতে পারেনি। ঘুরপাক খেয়ে ছিটকে পড়ে মাঠে। আবুল কালাম আজাদ ও তাঁর সহযোদ্ধারা চেঁচিয়ে ওঠেন সাফল্যের উল্লাসে। এদিন ছিল আবুল কালাম আজাদ ও তাঁর সহযোদ্ধাদের জীবনে সবচেয়ে স্মরণীয় দিন।

আবুল কালাম আজাদ ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ২৫ বালুচ রেজিমেন্টে। এর অবস্থান ছিল যশোর সেনানিবাসে। ওই বছরই তাঁকে প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট থেকে সেখানে বদলি করা হয়। যোগ দেওয়ার পর ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক তাঁর পাশাপাশি রেজিমেন্টে কর্মরত বেশির ভাগ বাঙালিকে ছুটি দেন।

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে নিজ এলাকায় প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে গিয়ে চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দেন। পুনর্গঠিত হওয়ার পর রাজনগর সাবসেক্টরে যুদ্ধ করেন। পরে তাঁকে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর নবগঠিত ১০ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান