বিজ্ঞাপন
default-image

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার অন্তর্গত যাদবপুর-রাজাপুর। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এই এলাকায় নিয়মিত টহল দিত। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল, ভারত থেকে যাতে মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারেন।

২১ সেপ্টেম্বর আবদুস সাত্তারসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর টহলদলকে অ্যামবুশ করার জন্য সুবিধাজনক একটি স্থানে অবস্থান নেন। জায়গাটি ছিল জঙ্গলাকীর্ণ। আশপাশে বাড়িঘর বা মানুষজন ছিল না।

মুক্তিযোদ্ধাদের সেখানে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। অপেক্ষার প্রায় শেষ পর্যায়ে সেখানে হাজির হয় সেনা টহলদল। তারা ফাঁদের মধ্যে আসামাত্র মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র গর্জে ওঠে। পাকিস্তানি সেনারা আক্রমণের জন্য প্রস্তুতই ছিল। তারাও পাল্টা আক্রমণ চালায়।

শান্ত এলাকা নিমেষে পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। গোলাগুলিতে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। পাকিস্তানি সেনারা অস্ত্রশস্ত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়ে এগিয়ে ছিল। প্রথম দিকে তারা ব্যাপক গোলাগুলি করে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে। মুক্তিযোদ্ধারা বিচলিত না হয়ে সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। এ ছাড়া তাঁদের অবস্থান ও প্রস্তুতি ছিল যথেষ্ট ভালো।

পাকিস্তানি সেনারা কিছুক্ষণের মধ্যেই কোণঠাসা ও পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে। গুলির আঘাতে একের পর এক মাটিতে লুটিয়ে পড়ে বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। তিন-চারজন সঙ্গে সঙ্গে নিহত হয়। বাকিরা আহত। এরপর পাকিস্তানিরা পালানোর পথ খুঁজতে থাকে। কিন্তু সে পথও ছিল প্রায় রুদ্ধ। এ অবস্থায় তারা মরিয়া হয়ে যুদ্ধ শুরু করে।

অন্যদিকে সাফল্য ও জয়ের নেশা পেয়ে বসে আবদুস সাত্তার ও তাঁর কয়েক সহযোদ্ধার মধ্যে। প্রবল গোলাগুলির মধ্যে তাঁরা নিরাপদ স্থান থেকে বেরিয়ে ক্রল করে এগিয়ে যান পাকিস্তানি সেনাদের দিকে। বিপুল বিক্রমে চড়াও হন শত্রুর ওপর। তাঁদের অস্ত্রের গুলিতে হতাহত হয় আরও কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা।

এ সময় হঠাত্ গুলিবিদ্ধ হন অদম্য সাহসী ও বিক্রমী যোদ্ধা আবদুস সাত্তার। পাকিস্তানিদের এলএমজির বুলেট বিদীর্ণ করে দেয় তাঁর দেহ। লুটিয়ে পড়েন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে নিভে যায় তাঁর জীবনপ্রদীপ।

সেদিন যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর টহলদলের প্রায় সবাই নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে আবদুস সাত্তারসহ দুজন শহীদ ও তিন-চারজন আহত হন। যুদ্ধ শেষে সহযোদ্ধারা আবদুস সাত্তারকে সমাহিত করেন শার্শা উপজেলার অন্তর্গত কাশীপুরে।

আবদুস সাত্তার ইপিআরে চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন যশোর সেক্টরে। প্রতিরোধযুদ্ধে তাঁর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এই যুদ্ধ শেষে তিনি ভারতে যান। পরে ৮ নম্বর সেক্টরের বয়রা সাবসেক্টরে সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান