বিজ্ঞাপন
default-image

মুক্তিবাহিনীর সাব-সেক্টরের অধিনায়ক কয়েকজন দলনেতাকে ডেকে পাঠালেন। আবদুল হক ভূঁইয়াসহ কয়েকজন যাওয়ার পর তিনি বললেন, ‘খবর এসেছে, মন্দভাগে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবস্থানে সেনা পরিবর্তন হবে। নতুন একটি দল কাল সেখানে আসবে। তাদের অ্যামবুশ করতে হবে। আপনারা কে যাবেন?’ আবদুল হক ভূঁইয়া হাত তুললেন। অধিনায়ক তাঁর পিঠ চাপড়ে দ্রুত তৈরি হতে বললেন। তাঁর সঙ্গে দেওয়া হলো বাছাই করা আটজন মুক্তিযোদ্ধা আর চারটি এলএমজি ও পাঁচটি এসএমজি। আবদুল হক ভূঁইয়া সিদ্ধান্ত নিলেন, তাঁরা প্রথমে সিদলাই (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) গ্রামে যাবেন। কারণ, নতুন পাকিস্তানি সেনারা মন্দভাগে আসবে জলপথে। সিদলাই গ্রামের অদূরে দুটি নদীর সংযোগস্থল। সেখানে আছে একটি কুমারপাড়া। এলাকাটা জনমানবশূন্য।

অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায়। নতুন করে পরিখাও করতে হবে না। ওখানে আছে অনেক ছোট ছোট গর্ত। ভোর হওয়ার আগেই তাঁরা তিনটি গর্তে অবস্থান নিলেন। সময় গড়িয়ে দুপুর হলো। পাকিস্তানি সেনাদের দেখা নেই। মুক্তিযোদ্ধারা রোদে পুড়ে ও ক্ষুধায় প্রায় কাতর। দুু-তিনজন অস্থির হয়ে পড়লেন। কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা বললেন, আজ বোধ হয় পাকিস্তানি সেনারা আসবে না। কিন্তু আবদুল হক ভূঁইয়া সন্ধ্যা পর্যন্ত দেখতে চান।

সূর্য তখন পশ্চিমে হেলতে শুরু করেছে। এমন সময় নদীতে একটি নৌকা দেখা গেল। তাতে একটি লাল পতাকা। এ নৌকার বেশ পেছনে আরও দুটি নৌকা। আবদুল হকের মনে হলো, সামনের নৌকায় পাকিস্তানি সেনারা নেই। তাঁর অনুমানই সত্য হলো। নৌকায় কয়েকজন রাজাকার ও খাদ্যদ্রব্য। তিনি নির্বিঘ্নে নৌকাটি যেতে দিলেন। একটু পর বাকি দুই নৌকা এগিয়ে এল। নৌকাবোঝাই পাকিস্তানি সেনা। নদীর পাড় দিয়েও হেঁটে আসছে কিছু পাকিস্তানি সেনা। জলে ও ডাঙায় মিলে ১৩০-১৪০ জন। এক কোম্পানি। এত পাকিস্তানি সেনা দেখে মুক্তিযোদ্ধারা ভড়কে গেলেন। আবদুল হক ভূঁইয়া তাঁদের সাহস জুগিয়ে বললেন, পাকিস্তানি সেনারা পানিতে। অল্প কয়েকজন ডাঙায়। ভয় পাওয়ার কারণ নেই। নৌকা তাঁদের গুলির আওতায় আসামাত্র গর্জে উঠল সব অস্ত্র। পাকিস্তানি সেনারা প্রতিরোধের তেমন সুযোগ পেল না। বেঁচে যাওয়া পাকিস্তানি সেনারা পানিতে ঝাঁপ দিল। আহত ও নিহত সেনারা নৌকায় ও পানিতে গড়িয়ে পড়ল। আবদুল হক ও তাঁর সহযোদ্ধারা একনাগাড়ে গুলি করে দ্রুত সরে পড়লেন সেখান থেকে।

এ ঘটনা ১৯৭১ সালের আগস্টের শেষ দিকের। মুক্তিযোদ্ধাদের এই অ্যামবুশে ৩৫-৩৬ জন পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের একজন শহীদ হন।

আবদুল হক ভূঁইয়া ১৯৭১ সালে ভূমি জরিপ বিভাগে কাজ করতেন। মুজাহিদ বাহিনীর প্রশিক্ষণও তাঁর নেওয়া ছিল। তিনি ছিলেন মুজাহিদ বাহিনীর ক্যাপ্টেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন। ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে যুদ্ধ করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান