বিজ্ঞাপন
default-image

প্রতিরোধযুদ্ধ চলাকালে আবদুল বারিক ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ায় প্রতিরক্ষা অবস্থানে ছিলেন। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের শেষ দিকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সেখানে আক্রমণ করে। তাঁরা সাহসের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ প্রতিহত করেন। তাঁদের পাল্টা আক্রমণে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বিপুল ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়। তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পশ্চাদপসরণ করে। কয়েক দিন পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ১২ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানে আবার আক্রমণ করে। এবার তারা আক্রমণ করে বিভিন্ন দিক থেকে। প্রতিরোধযোদ্ধারা সাহসের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের মোকাবিলা করলেও কিছু এলাকা তাঁদের হাতছাড়া হয়ে যায়। এ অবস্থায় তাঁদের অধিনায়ক সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তানি অবস্থানে পাল্টা আক্রমণের। পরিকল্পনা অনুযায়ী, একদিন রাত ১২টার দিকে তিন কোম্পানি প্রতিরোধযোদ্ধা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবস্থানের ওপর অতর্কিতে আক্রমণ করে। সেদিন টিপটিপ বৃষ্টি হচ্ছিল। আবদুল বারিকের কাছে ছিল মর্টারগান। তিনি পাকিস্তানি ঘাঁটিতে সেই মর্টারগান দিয়ে বোমার বিস্ফোরণ ঘটান। এতে পাকিস্তানি সেনাদের একটি মেশিনগান পোস্ট ধ্বংস হয় ও গাড়িতে আগুন ধরে যায়। তাঁদের আক্রমণে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ২০-২৫ জন হতাহত হয়।

আবদুল বারিক পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। এর অবস্থান ছিল কুমিল্লা সেনানিবাসে। তিনি ডেলটা কোম্পানিতে ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তাঁদের কোম্পানি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছিল। ২৭ মার্চ তাঁরা মেজর সাফায়েত জামিলের নেতৃত্বে বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। এরপর তাঁদের কোম্পানি আখাউড়ায় প্রতিরক্ষা অবস্থান নেয়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আখাউড়া দখল করলে তাঁরা সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে যান।

জুন মাসের মাঝামাঝি (আনুমানিক ১৪ জুন) ২ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক খালেদ মোশাররফের নির্দেশে মুক্তিবাহিনীর একটি দল কুমিল্লা জেলার বুড়িচং থানায় আক্রমণ করে। এ আক্রমণে আবদুল বারিকও অংশ নেন। তাঁরা ছিলেন ১৬ জন। কুমিল্লা জেলা সদরের উত্তর-পশ্চিমে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বুড়িচং থানা। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এই থানায় বিপুলসংখ্যক পশ্চিম পাকিস্তানি পুলিশ ও মিলিশিয়া নিয়োগ করে। এই বুড়িচং দিয়েই মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদের চলাচল করতে হতো। পশ্চিম পাকিস্তানি পুলিশ ও মিলিশিয়াদের কারণে গেরিলাদের চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় খালেদ মোশাররফ তাঁদের বুড়িচং থানা আক্রমণে পাঠান। রাত একটার দিকে তাঁরা একযোগে থানায় আক্রমণ চালান। পশ্চিম পাকিস্তানি পুলিশ ও মিলিশিয়ারা প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুললেও শেষ পর্যন্ত তাঁদের কাছে পরাস্ত হয়। যুদ্ধে আটজন পশ্চিম পাকিস্তানি পুলিশ ও মিলিশিয়া নিহত এবং কয়েকজন আহত হয়। অন্যরা পালিয়ে যায়। মুক্তিবাহিনীর একজন আহত ও একজন শহীদ হন। এই যুদ্ধে আবদুল বারিক যথেষ্ট সাহস ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেন। পরে তিনি কয়েকটি যুদ্ধে অংশ নেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান