বিজ্ঞাপন
default-image

আবদুল জব্বার মিজি ইপিআরে চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন রাজশাহী সেক্টর হেডকোয়ার্টারের অধীনে নওগাঁ উইংয়ে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি এতে যোগ দেন। জয়পুরহাট জেলার বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধ করেন তিনি। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী জয়পুরহাট দখল করলে তিনি তাঁর দলের সঙ্গে ভারতে চলে যান। সেখানে তাঁকে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ৩১ জুলাই জামালপুরের বাহাদুরাবাদ ঘাট আক্রমণে তিনি অংশ নেন। তিনি ছিলেন আলফা কোম্পানিতে। তাঁর প্লাটুন কমান্ডার ছিলেন সুবেদার হাফিজ। এ যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। আবদুল জব্বার পরবর্তী সময়ে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ, কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী, কোদালকাটি এবং বৃহত্তর সিলেটের ছাতক, গোয়াইনঘাট, গোবিন্দগঞ্জসহ কয়েকটি জায়গায় যুদ্ধ করেন।

১৯৭১ সালের অক্টোবরের মাঝামাঝি ছাতকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে আবদুল জব্বার মিজি অংশ নেন এবং তিনি অসাধারণ বীরত্বের পরিচয় দেন। ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি ও সংলগ্ন শহর এলাকায় ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পাঞ্জাব রেজিমেন্টের একটি কোম্পানি। তাদের সহযোগী হিসেবে আরও ছিল দুই কোম্পানি ফ্রন্টিয়ার ফোর্স, ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্স ও রাজাকার। তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গলের আলফা ও ব্রাভো কোম্পানি পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থানের ওপর আক্রমণ করে। কিছুক্ষণ পর পর তারা নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর একের পর এক হামলা চালিয়ে যায়। তাদের প্রচণ্ড আক্রমণের একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনারা দিশেহারা হয়ে পড়ে। মুক্তিবাহিনীর আরআর গোলায় পাকিস্তানি সেনাদের বেশির ভাগ বাংকার ধ্বংস হয়।

যুদ্ধ শেষে যুদ্ধক্ষেত্রে শুধু পাকিস্তানি সেনাদের লাশ। ১৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় জীবিত পাকিস্তানি সেনারা পালিয়ে যায়। সিমেন্ট ফ্যাক্টরি এলাকা মুক্তিবাহিনীর দখলে চলে আসে। এ সময় সিলেট থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নতুন দল এসে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘেরাও করে। তাঁরা বিরাট ঝুঁকিতে পড়েন। এ অবস্থায় ক্যাপ্টেন আনোয়ার তাঁদের পিছিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। তাঁরা পাহাড়ি চোরাপথে কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও গলাপানি অতিক্রম করে ভারতীয় সীমান্তে চলে যান। এভাবে পাঁচ দিনের ছাতক অপারেশনের পরিসমাপ্তি ঘটে। এ অপারেশনে দুই পক্ষেরই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। তবে পাকিস্তানি সেনাদের ক্ষতির পরিমাণই ছিল বেশি। এই আক্রমণের খবর বিবিসিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হয়।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান