বিজ্ঞাপন
default-image

সকালবেলায় আবদুল গফুরের অবস্থান ধলাপাড়ার কাছাকাছি। গোলাগুলির শব্দ। তিনি বুঝতে পারলেন আশপাশে কোথাও পাকিস্তানি সেনারা এসেছে। আবদুল গফুর মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর সঙ্গে আছেন ৪০-৪৫ জন সহযোদ্ধা। দলনেতা তিনি নিজেই। ভাবলেন, পাকিস্তানি সেনাদের অতর্কিতে আক্রমণের সুযোগ পাওয়া গেছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।

আবদুল গফুরের অনুমান ভুল হলো না। বেলা আনুমানিক একটা। খবর পেলেন, শত্রুসেনারা ফিরে আসছে। কিছুক্ষণের মধ্যে নিজ চোখেই তাদের দেখতে পেলেন। কোথাও কোনো বাধা না পেয়ে পাকিস্তানি সেনারা বেশ নিশ্চিন্ত মনেই আসছে। সেনা ও সহযোগী রাজাকার মিলে সংখ্যায় তারা কম নয়। আবদুল গফুরের মনে হলো তাঁদের চেয়েও বেশি।

আবদুল গফুর এতে বিচলিত হলেন না। তিনি জানেন, আশপাশে আছে তাঁদের আরেকটি দল। খবর পেলে তারাও তাঁদের সঙ্গে যোগ দেবে। যদি না-ও আসে তাহলেও ক্ষতি নেই। যদি পাকিস্তানি সেনারা পাল্টা আক্রমণ করে, তিনি তাঁর দল নিয়েই তাদের মোকাবিলা করবেন। সহযোদ্ধাদের সাহস দিয়ে বললেন, পাকিস্তানি সেনারা পাল্টা আক্রমণের সুযোগ পাবে না। জান বাঁচাতে পালাতে থাকবে। আরও বললেন, তিনি সংকেত দেওয়ার আগে কেউ যেন গুলি না করেন।

অল্পক্ষণের মধ্যে পাকিস্তানি সেনা আর রাজাকাররা আবদুল গফুরের দলের মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রের আওতায় চলে এল। তিনি সংকেত দেওয়ামাত্র তাঁর সহযোদ্ধারা একযোগে গুলি শুরু করলেন। নিমেষে লুটিয়ে পড়ল কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার। বাকিরা ছোটাছুটি শুরু করে দিল। রাজাকাররা দিগিবদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে যে যেদিকে পারে পালিয়ে যায়। পাকিস্তানি সেনারা পজিশন নিয়ে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। শুরু হয়ে গেল প্রচণ্ড যুদ্ধ। ঘটনাচক্রে কাদেরিয়া বাহিনীর সামরিক প্রধান আবদুল কাদের সিদ্দিকীও (বীর উত্তম) কয়েকজন সহযোদ্ধাসহ সেদিন মাকড়াইয়ের কাছাকাছি ছিলেন। তিনিও ওই যুদ্ধে অংশ নেন।

সেদিন মাকড়াইয়ের যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। কয়েকজন নিহত ও অনেকে আহত হয়। প্রায় এক ঘণ্টা বা তার বেশি সময় ধরে যুদ্ধ চলে। এরপর পাকিস্তানি সেনারা নিহত ব্যক্তিদের ফেলে এবং আহতদের নিয়ে পালিয়ে যায়। মাকড়াই টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার অন্তর্গত। এ ঘটনা ঘটে ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের মাঝামাঝি বা শেষ দিকে।

আবদুল গফুর চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসে। সে সময় ছুটিতে বাড়িতে ছিলেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে তিনি কাদেরিয়া বাহিনীতে যোগ দেন। তাঁকে একটি দলের নেতৃত্ব দেওয়া হয়। ভূঞাপুর, ধলাপাড়া, দেওপাড়া, বল্লাসহ আরও কয়েকটি যুদ্ধে অংশ নেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান