বিজ্ঞাপন
default-image

১৯৭১ সালের এপ্রিলে টাঙ্গাইলের পতন হলে প্রতিরোধযোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। পরে তাঁরা টাঙ্গাইলের প্রত্যন্ত এলাকা সখীপুরে সমবেত হন। এখানে শুরু হয় তাদের পুনর্গঠন-প্রক্রিয়া। পরবর্তীকালে এ বাহিনীরই নাম হয় ‘কাদেরিয়া বাহিনী’। আবদুল কাদের সিদ্দিকী বাহিনীর সামরিক প্রধান এবং আনোয়ার-উল-আলম শহীদ বেসামরিক প্রধান ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধকালে আবদুল কাদের সিদ্দিকীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা টাঙ্গাইলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অসংখ্য সরাসরি যুদ্ধ ও অ্যামবুশ করেন। এর মধ্যে ধলাপাড়ার অ্যামবুশ অন্যতম।

ধলাপাড়া টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার অন্তর্গত। ১৬ আগস্ট আবদুল কাদের সিদ্দিকী ধলাপাড়ার কাছাকাছি একটি স্থানে ছিলেন। তিনি খবর পান, তাঁদের তিনটি উপদল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঘেরাও করেছে। তাঁদের সাহায্য করার জন্য তিনি সেখানে রওনা হন। এদিকে অবরুদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাদের পাল্টা আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা তখন পিছু হটছিল।

আবদুল কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন মাত্র ১০ জন। তিনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে পাকিস্তানিরা যে পথ দিয়ে পিছু হটছিল, সে পথে অবস্থান নেন। পাকিস্তানি সেনারা সংখ্যায় ছিল অনেক।

পাকিস্তানি সেনারা বেশ নিশ্চিন্ত মনেই আসছিল। ৪০ গজের মধ্যে আসামাত্র কাদের সিদ্দিকী এলএমজি দিয়ে প্রথম গুলি শুরু করেন। একই সময় তাঁর সহযোদ্ধাদের অস্ত্রও গর্জে ওঠে। নিমেষে সামনের কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। বাকি সেনারা প্রতিরোধ তো দূরের কথা, জীবন বাঁচানোর জন্য দিগিবদিকজ্ঞানশূন্য হয়ে যে যেদিকে পারে পালাতে থাকে।

এ দৃশ্য কাদের সিদ্দিকীকে উত্তেজিত করে তোলে। তিনি শোয়া অবস্থা থেকে উঠে পড়েন। দাঁড়িয়ে এলএমজি দিয়ে পলায়নপর পাকিস্তানি সেনাদের লক্ষ্য করে গুলি করতে থাকেন। তাঁর সহযোদ্ধারাও উঠে দাঁড়িয়ে গুলি করতে শুরু করেন। পাকিস্তানি সেনারা পাল্টা গুলি করতে করতে ঊর্ধ্বশ্বাসে পালাতে থাকে।

এ সময় হঠাত্ পাকিস্তানি সেনাদের ছোড়া গুলি ছুটে আসে আবদুল কাদের সিদ্দিকীর দিকে। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন তিনি। যুদ্ধ শেষে সহযোদ্ধারা তাঁকে দ্রুত চিকিত্সকের কাছে নিয়ে যান। পরে তাঁকে উন্নত চিকিত্সার জন্য ভারতে পাঠানো হয়। সেদিন তাঁদের হাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রায় ৪০ জন হতাহত হয়।

আবদুল কাদের সিদ্দিকী ১৯৭১ সালে শিক্ষার্থী ছিলেন। সামরিক প্রশিক্ষণও ছিল তাঁর। স্কুলে পড়াকালে তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দিয়েছিলেন। প্রশিক্ষণ শেষে সেনাবাহিনীতে কিছুদিন চাকরি করেন। ১৯৬৭ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে আবার শিক্ষাজীবনে ফিরে যান।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান