বিজ্ঞাপন
default-image

ধলই বিওপি দখলের যুদ্ধে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের সহযোদ্ধা ছিলেন আবদুল ওয়াহিদসহ কয়েকজন। একপর্যায়ে তাঁরা বুঝতে পারেন, পাকিস্তানি সেনাদের গুলির আওতায় পড়ে গেছেন। নিশ্চিত মৃত্যুর মুখোমুখি তাঁরা। তখন হামিদুর রহমান তাঁদের বলেন, ‘আমি খান সেনাদের (পাকিস্তানি সেনা) মোকাবিলা করছি, তোমরা যে যেভাবে পারো, নিরাপদ স্থানে সরে যাও।’ আবদুল ওয়াহিদ হামিদুর রহমানকে একা রেখে যেতে রাজি ছিলেন না। তিনি হামিদুর রহমানকে সঙ্গে নিয়েই নিরাপদ স্থানে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু হামিদুর রহমান তাঁর কথা শোনেননি।

মুক্তিযুদ্ধের সময় বেশ কয়েকটি যুদ্ধ আমাদের বিজয়ের পটভূমি তৈরি করে। এর মধ্যে ধলই বিওপি দখলের যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। ১৯৭১ সালের ২৭ অক্টোবর শেষ রাত থেকে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী ধলই বিওপি দখলের জন্য যুদ্ধ শুরু করে। পাঁচ দিনের প্রচণ্ড যুদ্ধের পর ধলই বিওপি মুক্তিবাহিনীর দখলে আসে। ধলই মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার অন্তর্গত। এখানে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্তিশালী একটি ঘাঁটি। দুই কোম্পানি ৩০ এফএফ, রাজাকার ও টসি ব্যাটালিয়নের দুই কোম্পানি। সব মিলিয়ে প্রায় এক ব্যাটালিয়ন শক্তি।

২৭ অক্টোবর সন্ধ্যার পরপরই মুক্তিবাহিনীর কয়েকটি দল সীমান্তের ওপার থেকে আক্রমণস্থলে রওনা হয়। শেষ রাতে আক্রমণ শুরু করার মুহূর্তে মুক্তিবাহিনীর একটি দলকে পাকিস্তানি সেনারা আগে আক্রমণ করে। তাদের আক্রমণের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে এতে মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রযাত্রা থেমে যায়। বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা গুরুতর আহত হন। উঁচু টিলার ওপর ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি এলএমজি পোস্ট। সেখান থেকে নিখুঁত নিশানায় গুলিবর্ষণ হচ্ছিল। এতে মুক্তিবাহিনীর হতাহতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছিল।

মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল ওই এলএমজি পোস্ট ধ্বংসের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। তখন সেটা ধ্বংসের দায়িত্ব পড়ে লেফটেন্যান্ট কাইয়ুমের নেতৃত্বাধীন মুক্তিবাহিনীর দলের ওপর। এই দলে ছিলেন হামিদুর রহমান, আবদুল ওয়াহিদসহ কয়েকজন। তাঁরা যান ওই এলএমজি পোস্ট ধ্বংস করার জন্য। কিন্তু তাঁরাও প্রচণ্ড গুলির মুখে পড়েন। তখন তাঁদেরও অগ্রযাত্রা থেমে যায়। একপর্যায়ে হামিদুর রহমান একাই সেদিকে এগিয়ে যান আর তাঁর কয়েকজন সহযোদ্ধা কাভারিং ফায়ার করতে থাকেন। হামিদুর রহমান ওই এলএমজি পোস্ট ধ্বংস করতে সক্ষম হলেও শহীদ হন তিনি।

আবদুল ওয়াহিদ চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন সিলেট হেডকোয়ার্টারের অধীনে তেলিয়াপাড়া সীমান্তে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যোগ দেন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ৩ নম্বর সেক্টরের মনতলা সাব-সেক্টরে এবং পরে জেড ব্রিগেডের অধীনে যুদ্ধ করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান