বিজ্ঞাপন
default-image

১৯৭১ সালের ১৭ অক্টোবর। শেষ রাতে গোলাগুলিতে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে চিলমারী। মুক্তিবাহিনীর কয়েকটি দল একযোগে আক্রমণ করেছে চিলমারীর বিভিন্ন পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা অবস্থানে। একটি দলে আছেন আবদুর রহিম। তিনি নিয়মিত বাহিনীর সদস্য। বিভিন্ন স্থানে আগুনের লেলিহান শিখা আর কালো ধোঁয়া। সকালের আলো ফোটার আগেই আগুনের আলোয় চারদিক আলোকিত হয়ে ওঠে। একদিকে গোলাগুলির প্রচণ্ড শব্দ, অন্যদিকে হতবিহ্বল নারী-পুরুষের ক্রন্দনরোল।

চিলমারী বর্তমানে কুড়িগ্রাম জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। এর অবস্থান ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিমে। চিলমারীর বিপরীতে ব্রহ্মপুত্রের পূর্বে রৌমারী। সেখান থেকে বিশাল ব্রহ্মপুত্র নদ অতিক্রম করে চিলমারীতে আক্রমণ পরিচালনা করা ছিল দুঃসাধ্য কাজ। ১৯৭১ সালে চিলমারীর কয়েকটি স্থানে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থান। এর মধ্যে ওয়াপদার অবস্থান ছিল সবচেয়ে সুরক্ষিত।

ওই অবস্থানেই আবদুর রহিম ও তাঁর সহযোদ্ধারা আক্রমণ করেন। দলনেতা ছিলেন নায়েক সুবেদার আবদুল মান্নান (বীর বিক্রম)। আবদুর রহিম তাঁর দলনেতার সঙ্গেই ছিলেন। ওয়াপদা ছাড়া চিলমারীর অন্যান্য পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা অবস্থান কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে। কিন্তু ওয়াপদার প্রতিরক্ষা অবস্থান থেকে পাকিস্তানি সেনাদের কোনোভাবেই হটানো সম্ভব হচ্ছিল না। ওয়াপদার অবস্থানে ছিল বেশ কয়েকটি কংক্রিটের বাংকার। বেশির ভাগ বাংকারে ছিল মেশিনগান। এর মধ্যে একটি ছিল বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে। সেখান থেকে পাকিস্তানি সেনারা অবিরাম গুলি ছুড়ছিল। একপর্যায়ে আবদুর রহিম জীবন বাজি রেখে ওই বাংকার ধ্বংস করার জন্য ক্রল করে এগিয়ে যান। বাংকারে গ্রেনেড ছোড়ার সময় তিনি গুলিবিদ্ধ হন।

আবদুর রহিমের রক্ত বৃথা যায়নি। মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের তিন দিক থেকে অবরোধ করে রাখেন। যুদ্ধ চলে কয়েক দিন। পরে পাকিস্তানি সেনারা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। শহীদ আবদুর রহিমকে সহযোদ্ধারা চিলমারীতে সমাহিত করেন। স্বাধীনতার পর তাঁর মরদেহ সেখান থেকে তুলে কসবার কুটি-চৌমুহনী এলাকায় পুনরায় সমাহিত করা হয়।

আবদুর রহিম ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন। চট্টগ্রামে প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেওয়ার পর তাঁর দলের সঙ্গে ভারতে যান। প্রথমে ১১ নম্বর সেক্টরের অধীনে, পরে জেড ফোর্সের অধীনে যুদ্ধ করেন। অক্টোবরের প্রথমার্ধে জেড ফোর্স সিলেট এলাকায় যায়। কিন্তু তাঁদের দল চিলমারীতে থেকে যায়। আবদুর রহিম রৌমারীর ঠাকুরের চরসহ কয়েকটি স্থানে যুদ্ধ করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান