বিজ্ঞাপন
default-image

শেরপুর সাদিপুর। সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার সংযোগস্থল। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে অর্থাত্ এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে একদল মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান নেন শেরপুর-সাদিপুরে। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইপিআর, আনসার-পুলিশ ও ছাত্র-যুবক সমন্বয়ে গড়া মুক্তিবাহিনী।

মুক্তিযোদ্ধাদের এই দলে ছিলেন আবদুর রহমান। তিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদস্য। তাঁদের নেতৃত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন আজিজুর রহমান (বীর উত্তম, পরে মেজর জেনারেল)।

আজিজুর রহমানের নির্দেশে ৭-৮ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে একাংশ সিলেট শহরে, একাংশ খাদিমনগর, একাংশ আম্বরখানা ও ওয়্যারলেস স্টেশনে অবস্থান নেয়। আরেকটি অংশ ছিল সুরমা নদীর দক্ষিণ তীরে। তারা ছিল ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের। এই দলেই ছিলেন আবদুর রহমান।

মুক্তিযোদ্ধারা ৮ এপ্রিল রাতেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হন। সিলেটের খাদিমনগরে প্রায় হাতাহাতি যুদ্ধ হয়। আম্বরখানায় সারা রাত যুদ্ধ চলে। আক্রমণকারী পাকিস্তানি সেনা ছিল সংখ্যায় বিপুল। তুলনায় মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন অনেক কম।

রাত তিনটার দিকে যুদ্ধের মোড় ঘুরে যায়। পাকিস্তানি সেনাদের প্রচণ্ড আক্রমণে বেশির ভাগ অবস্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটতে বাধ্য হন। চার ঘণ্টা যুদ্ধ করে পাকিস্তানি সেনারা সিলেট শহরের বেশির ভাগ দখল করে নেয়। তবে সুরমা নদীর দক্ষিণ তীর মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে ছিল। কিন ব্রিজের দক্ষিণ প্রান্তে ছিল আবদুর রহমানের দলের এলএমজি পোস্ট। কয়েকজন সহযোদ্ধাসহ তিনি নিজেই ছিলেন এই পোস্টের দায়িত্বে।

সেখানে পকিস্তানি সেনারা শেষ রাত থেকে বিরামহীনভাবে গোলাবর্ষণ শুরু করে। এর ছত্রচ্ছায়ায় তারা ওই স্থান দখলের চেষ্টা চালায়। আবদুর রহমান এলএমজি দিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের মোকাবিলা করেন। তাঁর ও সহযোদ্ধাদের সাহস দেখে পাকিস্তানি সেনারা পরদিন (৯ এপ্রিল) সকাল পর্যন্ত নদী পারাপারে বিরত থাকতে বাধ্য হয়।

কিন্তু পরিস্থিতি ক্রমে পাকিস্তানি সেনাদের পক্ষে চলে যায়। একপর্যায়ে কিন ব্রিজের এলএমজি পোস্টের অবস্থান বিপজ্জনক হয়ে পড়ে। তার পরও আবদুর রহমান এতে বিচলিত হননি বা সাহস হারাননি। তখন তাঁর সহযোদ্ধারা পশ্চাদপসরণ করতে চাইলে তিনি একজন তেজি যোদ্ধার মতোই বলেন, যতক্ষণ জীবিত আছেন ততক্ষণ তিনি এই অবস্থান ধরে রাখবেন। ঠিক এই সময় পাকিস্তানি সেনাদের ছোড়া গোলা ওই এলএমজি পোস্টে এসে পড়ে। গোলার স্প্লিন্টারের আঘাতে সঙ্গে সঙ্গে শহীদ হন অমিত সাহসী আবদুর রহমান। এরপর সেখানকার প্রতিরোধও ভেঙে পড়ে।

আবদুর রহমান চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১-এ কর্মরত ছিলেন দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। এর অবস্থান ছিল জয়দেবপুরে। তখন তাঁর পদবি ছিল ল্যান্স নায়েক।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান