বিজ্ঞাপন
default-image

জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া ইউনিয়নের একটি গ্রাম কামালপুর। ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকা। এ গ্রামের মাঝামাঝি আছে সীমান্ত ফাঁড়ি (বিওপি)। ১৯৭১ সালে এখানে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্তিশালী একটি প্রতিরক্ষা অবস্থান।

মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে ৪ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী সিদ্ধান্ত নেয়, কামালপুরের পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করতে হবে। এ জন্য তাদের কাছে আত্মসমর্পণের আহ্বানসংবলিত চিঠি পাঠানো হবে। মুক্তিযোদ্ধা বশির আহমেদ মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে দায়িত্ব নিলেন এই দুরূহ কাজের। রওনা হলেন পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্প অভিমুখে। সময় গড়াতে লাগল, কিন্তু তিনি ফিরে এলেন না। এরপর সেখানে আরেকজনের যাওয়ার পালা এল। এবার দায়িত্ব নিলেন আনিসুল হক আকন্দ। সহযোদ্ধারা তাঁকে সঞ্জু নামে চিনতেন।

সঞ্জুও ফিরে এলেন না। সহযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর সবাই ভাবলেন, হয় পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে, না হয় মাইন বিস্ফোরণে মারা গেছেন তাঁরা দুজনই। এমন সময় সবাই সঞ্জুকে ফিরে আসতে দেখলেন। তিনি প্রায় দৌড়াতে দৌড়াতে এলেন। এসেই হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন, পাকিস্তানি সেনারা আত্মসমর্পণে রাজি হয়েছে আর বশির আহমদ পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পে আছেন। বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী প্রথম আত্মসমর্পণ করে কামালপুরে।

আনিসুল হক আকন্দ ১৯৭১ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে যান। পরে প্রশিক্ষণ নিয়ে মহেন্দ্রগঞ্জ সাব-সেক্টরে যোগ দেন। তিনি ছিলেন একজন সাহসী গণযোদ্ধা। বেশ কটি সম্মুখযুদ্ধেও অংশ নেন। এর মধ্যে ৩১ জুলাইয়ের যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য।

১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বরের গেজেটে বীর প্রতীকের তালিকায় ৩৯২ নম্বরে লেখা আছে মো. আনিসুর রহমান (সঞ্জু) এবং ৩৯৮ নম্বরে লেখা আছে আনিসুল হক আকন্দ। মো. আনিসুর রহমান (সঞ্জু) নামের কেউ বীর প্রতীক খেতাব দাবি করেননি। এ দুই নাম সম্ভবত একই ব্যক্তির।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান