বিজ্ঞাপন
default-image

গোলাম রসুল ইপিআরে চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন সিলেট সেক্টর হেডকোয়ার্টার্সের ৩ নম্বর উইংয়ের বি কোম্পানিতে। এই কোম্পানির কমান্ডার ছিলেন সুবেদার ফজলুল হক চৌধুরী। কোম্পানির দুই প্লাটুনের একটি সিলেটের শমশেরনগর বিমানবন্দর রক্ষণাবেক্ষণে, অপরটি প্রশিক্ষণরত ছিল। গোলাম রসুল ছিলেন শমশেরনগরে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণের খবর পেয়ে বিদ্রোহ করে সিলেটে তাঁরাই প্রথম ২৭ মার্চ শমশেরনগর বিমানবন্দরে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ করেন। এই আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়ে সিলেটে চলে যেতে বাধ্য হয়। পরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাঁদের ওপর পাল্টা আক্রমণ করে। তখন তাঁরা সেখান থেকে পিছিয়ে গিয়ে মাধবপুরে প্রতিরক্ষা অবস্থান নেন। এপ্রিলের মাঝামাঝি পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের অবস্থানগুলোর সন্ধান পেয়ে যায়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আর্টিলারি ও বিমান হামলার মধ্যেও তাঁরা সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করে অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু অব্যাহত হামলার মুখে তাঁরা টিকে থাকতে ব্যর্থ হন। এরপর তাঁরা ভারতে চলে যান।

ভারতে পুনর্গঠিত হওয়ার পর গোলাম রসুল যুদ্ধ করেন ৪ নম্বর সেক্টরের বড়পুঞ্জী সাব-সেক্টর এলাকায়। এই সাব-সেক্টর ছিল সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার অংশবিশেষ নিয়ে। এই এলাকায় ছিল পাহাড়ি টিলা, চা-বাগান, অসংখ্য খালবিল, ঝোপ-জঙ্গল। আগস্ট-সেপ্টেম্বরের পর তাঁরা একের পর এক অ্যামবুশ, আকস্মিক হামলা, ডিমোলিশনসহ বিভিন্ন ধরনের অপারেশন চালিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের পর্যুদস্ত করেন। ১৪ ডিসেম্বর চিকনাগুলে সরাসরি এক যুদ্ধে গোলাম রসুল শহীদ হন।

সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার চিকনাগুল সীমান্তবর্তী এলাকা। সেখানে চা-বাগানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত একটি ঘাঁটি ছিল। সারা দেশে তখন মুক্তিযোদ্ধাদের জয়জয়কার। বাংলাদেশের বেশির ভাগ এলাকা তাঁদের দখলে। কিন্তু চিকনাগুলে তখনও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ঘাঁটি। ভৌগোলিক কারণে চিকনাগুলের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। কাজেই মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এই ঘাঁটি আক্রমণ অপরিহার্য হয়ে পড়ে। ১৩ ডিসেম্বর গভীর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা ওই ঘাঁটিতে আক্রমণ চালান। এই দলে গোলাম রসুলও ছিলেন। পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ প্রবলভাবে প্রতিরোধ করতে থাকে। ১৪ ডিসেম্বর সকালে মুক্তিযোদ্ধারা চারদিক থেকে সাঁড়াশি আক্রমণ করেন। গোলাম রসুলসহ কয়েকজন যুদ্ধ করতে করতে পাকিস্তানি অবস্থানের মধ্যে ঢুকে পড়েন। তাঁদের প্রচণ্ড আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা দিশেহারা হয়ে পড়ে। হঠাত্ পাকিস্তানি সেনাদের এলএমজির গুলি এসে লাগে গোলাম রসুলের গায়ে। তিনি শহীদ হন। গোলাম রসুলসহ আরও দুজন মুক্তিযোদ্ধার জীবনের বিনিময়ে মুক্ত হয় চিকনাগুল।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান