বিজ্ঞাপন
default-image

খন্দকার আজিজুল ইসলামের বড় বোন নূর বেগম তাঁর স্মৃতিচারণায় লিখেছেন, ‘...আমার মা ছিলেন আগের দিনের মানুষ। বাবুল (খন্দকার আজিজুল ইসলাম) মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের আগে মায়ের কাছে গল্প বলত। একদিন বলল, এক দেশে যুদ্ধের কারণে তরুণদের সেনাবাহিনীতে যোগদানের আহ্বান জানানো হয়েছে। রিক্রুটমেন্ট সেন্টারে সমবেত ব্যক্তিদের বাড়িতে কে কে আছে জিজ্ঞেস করায় সবাই বলল যে মা-বাবা, ভাই-বোন আছে। শুধু একজন বলল, বাড়িতে তার মা ছাড়া আর কেউ নেই। তখন কর্তৃপক্ষ তাকে বলে, মাকে দেখাশোনা করাই তার বড় দায়িত্ব। এই বলে তাকে ফেরত পাঠায়। বাড়ি আসার পর মা ছেলের কাছে ফিরে আসার কারণ জানতে চান। ছেলে বলল, “তোমার জন্য যুদ্ধে যোগ দেওয়া হলো না।” এরপর মা আত্মহত্যা করেন, যাতে ছেলে দেশের জন্য যুদ্ধে যোগ দিতে পারে। এই গল্প বলে বাবুল বলত, “মা, তুমি ওই রকম মা হতে পারো না!” তারপর মে মাসের প্রথম দিকে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের উদ্দেশ্যে বাবুল কাউকে না বলে লুকিয়ে চলে যাচ্ছিল। ধরা পড়ে যাওয়ায় মাকে বলে, “তুমি তো সব দেখছ। দেশের ওপর অত্যাচার, নারীদের ওপর নির্যাতন, এটা সহ্য করা যায় না। আমাকে দেশের জন্য কিছু করতেই হবে।”’

খন্দকার আজিজুল ইসলাম বাড়ি থেকে বেরিয়ে চাচাতো ভাই আজিমকে (চিকিত্সক ও মুক্তিযোদ্ধা) সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় আসেন। তারপর কয়েকজনের সঙ্গে মিলে দল বেঁধে ভারতের আগরতলায় যান। তাঁদের মুক্তিবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পর তিনি সীমান্ত এলাকায় ছোটখাটো অপারেশনে অংশ নেন। এরপর তিনি প্রথম বাংলাদেশ অফিসার্স ওয়ার কোর্সে যোগ দেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা রেলস্টেশনের পাঁচ কিলোমিটার উত্তরে চন্দ্রপুর। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২২ নভেম্বর মিত্র ও মুক্তিবাহিনী যৌথভাবে সেখানকার পাকিস্তানি অবস্থানে আক্রমণ করে। মুক্তিবাহিনীর একটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন খন্দকার আজিজুল ইসলাম। চন্দ্রপুরে সেদিন রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে মিত্রবাহিনীর একজন মেজর (কোম্পানি কমান্ডার), তিনজন জুনিয়র কমিশন্ড অফিসারসহ ৪৫ জন এবং মুক্তিবাহিনীর লেফটেন্যান্ট খন্দকার আজিজুল ইসলামসহ ২২-২৩ জন শহীদ হন। আহত হন ৩৫ জন। সারা রাত যুদ্ধ চলে। একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনারা সেখান থেকে পিছু হটে। মুক্তি ও মিত্রবাহিনী চন্দ্রপুর দখল করে নেয়। কিন্তু বেশিক্ষণ এই অবস্থান তাঁদের পক্ষে ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। কয়েক ঘণ্টা পর পাকিস্তানি সেনারা আবারও প্রচণ্ড আক্রমণ চালিয়ে চন্দ্রপুর-লতুয়ামুড়া দখল করে নেয়। পরে খন্দকার আজিজুল ইসলামের মরদেহ উদ্ধার করে সমাহিত করা হয় চন্দ্রপুর মসজিদের পাশে।

খন্দকার আজিজুল ইসলাম ১৯৭১ সালে ঢাকা কলেজের বিএ শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান