বিজ্ঞাপন
default-image

কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিচেল শার্প দেশটির কমন্স সভায় ৩০ জুন জানান, কানাডা পাকিস্তানে সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানির সব অনুমতি বাতিল করেছে। পদ্মা জাহাজে যাতে কানাডার কোনো অস্ত্র না তোলা হয়, তার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, পাকিস্তানি মালবাহী জাহাজ পদ্মার মাধ্যমে জঙ্গি বিমানের খুচরা যন্ত্রাংশ পাকিস্তানে রপ্তানির কথা ছিল। পদ্মা জাহাজ সেসব নেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বন্দর থেকে রওনা হয়ে যথারীতি মন্ট্রিয়েল বন্দরেও পৌঁছেছিল। শেষ মুহূর্তে রপ্তানিকারককে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর এফ-৮৬ স্যাবর জেট জঙ্গি বিমানের জন্য ৪৬টি বাক্সবোঝাই যন্ত্রাংশ পাকিস্তানি জাহাজ পদ্মায় তোলার আগেই কানাডা সরকারের নির্দেশে আটক করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ক্রিস্টোফার ভ্যান হোলেন আভাস দেন, পাকিস্তানে অস্ত্র সরবরাহের ব্যাপারে হোয়াইট হাউসের সাম্প্রতিক বিধিনিষেধের আগেই পাকিস্তানি জাহাজের অস্ত্রের রপ্তানি লাইসেন্স দেওয়া হয়ে থাকলে ওই সব জাহাজের পাকিস্তানে যাওয়া বন্ধের ব্যাপারে ওয়াশিংটন কিছু করবে না।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বিশেষ দূত এবং দেশটির পর্যটনমন্ত্রী করণ সিং বাংলাদেশের ঘটনাবলি এবং শরণার্থী পরিস্থিতি সম্পর্কে জানাতে বেলগ্রেডে যুগোস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটোর সঙ্গে দেখা করেন। সেখানে তিনি তাঁকে এ বিষয়ে বিশদ বিবরণ দেন। সব শুনে মার্শাল টিটো ভারত উপমহাদেশে অবস্থার অবনতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার প্রিন্স সদরুদ্দিন আগা খান লন্ডনে এক সাংবাদিক বৈঠকে জানান, জাতিসংঘ এবং অন্য সংস্থাগুলো শরণার্থীদের জন্য এ পর্যন্ত ১৬ কোটি ডলার সাহায্য সংগ্রহ করেছে। তবে শরণার্থীদের জন্য যা প্রয়োজন তার কাছাকাছিও পৌঁছায়নি। তিনি আরও বলেন, একমাত্র রাজনৈতিক সমাধানই শরণার্থীদের দেশে প্রত্যাবর্তনের পথ প্রশস্ত করতে পারে।

বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে

বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ইয়াহিয়া খানের ভাষণটিকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাঁর শাসনতান্ত্রিক পরিকল্পনা সাড়ে সাত কোটি বাঙালির সঙ্গে একটি নিষ্ঠুর রসিকতা ছাড়া কিছুই নয়।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী দিল্লিতে কংগ্রেস সেবাদল ক্যাম্পে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রসঙ্গক্রমে বাংলাদেশের শরণার্থীদের বিষয়ে বলেন, ভারত দরিদ্র দেশ, তবু বাংলাদেশের লাখ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় ও খাদ্য দিতে ভারতই এগিয়ে এসেছে।

নিউইয়র্ক টাইমস-এর দক্ষিণ এশীয় সংবাদদাতা সিডনি শনবার্গকে ৩০ জুন পূর্ব পাকিস্তান থেকে বহিষ্কার করা হয়। শনবার্গ বিমানবন্দরে অবতরণের পরপরই পাকিস্তানের সামরিক কর্তৃপক্ষ তাঁকে ‘পাকিস্তানের নিরাপত্তার স্বার্থে’ ঢাকা ত্যাগে বাধ্য করে। মার্চেও সিডনি শনবার্গ আরেকবার ঢাকা ত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন।

পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক প্রাদেশিক মন্ত্রী হাশিমউদ্দিন আহমদ ময়মনসিংহে এক সভায় বলেন, সীমান্তবর্তী শহরগুলোতে ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীদের অপতৎপরতা গভীর উৎকণ্ঠার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সূত্র: ইত্তেফাকআজাদ, ১ ও ২ জুলাই ১৯৭১; নিউইয়র্ক টাইমস, ১ জুলাই ১৯৭১; আনন্দবাজার পত্রিকাযুগান্তর, ভারত, ১ ও ২ জুলাই ১৯৭১।

গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান