বিজ্ঞাপন
default-image

ক্যাপ্টেন মাহমুদ হোসেন আকন্দের পরিণতি কখনোই জানতে পারেনি পরিবার। দিনের পর দিন কেটে যায়, কোনো খবর মেলেনি, চোখের পানিতে ভেসে যায় মায়ের বুক, স্ত্রীর চোখে অবিরাম অশ্রুধারা।

শহীদ মাহমুদ হোসেন আকন্দের মা বেগম জেবুন্নেসা লিখেছেন, ‘আমি ক্ষতবিক্ষত ভগ্নহৃদয়ে শুধু ধরে রেখেছি মাহমুদের বিমূর্ত স্মৃতি আর প্রহর গুনছি কবে, কখন, কোথায় মাহমুদের সঙ্গে আমার দেখা হবে (স্মৃতি: ১৯৭১, সম্পাদনা রশীদ হায়দার, বাংলা একাডেমি, পুনর্বিন্যাসকৃত দ্বিতীয় খণ্ড ।)’

মাহমুদ আর ঘরে ফেরেননি। বর্বর পাকিস্তানি ঘাতক সেনারা তাঁকে প্রথমে পরিবার থেকে আলাদা করে রাখে, তারপর পাকিস্তানে পাঠানোর নামে কোথায় নিয়ে গেছে, কারও জানা নেই। মাহমুদ হোসেন ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন চট্টগ্রাম সেনানিবাসে।

মাহমুদ হোসেনের জন্ম ১৯৪১ সালে ময়মনসিংহ শহরে। তাঁরা আট ভাইবোন। বাবা মোশাররফ হোসেন আকন্দ ছিলেন ময়মনসিংহের খ্যাতনামা আইনজীবী। তিনি ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পরিষদে সদস্য নির্বাচিত হন।

ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক, আনন্দমোহন কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক এবং ১৯৬৩ সালে ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যন্ত্রকৌশলে স্নাতক ডিগ্রি নেন মাহমুদ হোসেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ২৭ মার্চ থেকে মাহমুদ হোসেনকে তাঁর বাসাতে সস্ত্রীক আটকে রাখা হয়।

মাহমুদের বাবার বাড়ি বা শ্বশুরবাড়ির কেউই তাঁর খবরাখবর পাচ্ছিলেন না। একদিন এক পাঞ্জাবি ক্যাপ্টেন মাহমুদ হোসেনকে নিয়ে তাঁর শ্বশুরবাড়িতে যান। দেখা করার জন্য মাত্র এক ঘণ্টা সময় দেন। মাহমুদ তখন কাঁদছিলেন, সবার কাছে কান্নাজড়িত কণ্ঠে দোয়া চেয়েছেন। পাঞ্জাবি ক্যাপ্টেন আত্মীয়দের বলেন, মাহমুদ হোসেনের মেজর পদে পদোন্নতি হবে, এ জন্য তাঁকে পাকিস্তানে পাঠানো হবে। এ কথা বলে মাহমুদকে আবার সেনানিবাসে নিয়ে যান।

মাহমুদ হোসেনের স্ত্রীর বড় ভাই সেনানিবাসে যোগাযোগ করলে বলা হয়, তঁকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর বাসার জিনিসপত্র তাঁরা নিয়ে যেতে পারেন। মাহমুদ হোসেনের একটি প্রিয় মোটরসাইকেল ছিল, শুধু সেটিই তাঁরা নিয়ে এসেছিলেন। পরিবারের কাছে সেটিই ছিল মাহমুদের শেষ স্মৃতিচিহ্ন।

গ্রন্থনা: আশীষ-উর-রহমান