বিজ্ঞাপন
default-image

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের পুরাতন জনপদ রামনগরের নাম এখন মতিনগর। এখানেই কেটে ছিল বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের ছেলেবেলা। নামকরণের সব প্রস্তুতি শেষ, তবে এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি জেলা প্রশাসন। কিন্তু এলাকার মানুষ এখনই নিজেদের মতিনগরের বাসিন্দা হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করছে। শুধু তাই নয়, প্রস্তুাবিত মতিনগরের রামনগর উচ্চবিদ্যালয়ের পাশেই ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরি হচ্ছে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মতিউর রহমান গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। মাস দুয়েকের মধ্যেই গ্রন্থাগার ও জাদুঘরটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

গত বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রামনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী ছুটির পর বইখাতা হাতে দাঁড়িয়ে আছে নির্মাণাধীন জাদুঘরের সামনে। এখানে কেন এসেছে, জানতে চাইলে তাদের উত্তর, ‘শুধু আজগাই আই নাই, প্রতিদিনই এইহ্যানে আহি।’ গ্রামের নাম জিজ্ঞেস করতেই সমস্বরে তিনজনের এক উত্তর, ‘মতিনগর’। এই শিশুদের মতো বৃদ্ধ থেকে শুরু করে সবাই এখন গর্বিত নতুন নাম নিয়ে।

মতিউর রহমানের সঙ্গে রামনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তেন বৃদ্ধ আব্দুল আজিজ। তিনি জানান, এই দাবিটি গ্রামবাসীর অনেক আগে থেকেই ছিল।

default-image

তবে শুধু রামনগরই মতিউর রহমানকে নিয়ে ভাববে—মানতে পারেনি জেলা সদরের কিছু যুবক। জেলা সদর স্টেডিয়ামের নামকরণসহ কয়েক দফা দাবি নিয়ে তারা শুরু করে সামাজিক আন্দোলন। তাদের দাবি মেনে নিয়ে জেলা প্রশাসন চলতি মাসে নরসিংদী স্টেডিয়ামের নাম বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়াম রেখেছে। এরই মধ্যে নামফলক ও সাইনবোর্ড স্থাপনের কাজও হয়ে গেছে। এ দাবির প্রধান উদ্যোক্তা শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা চেয়েছি বীরশ্রেষ্ঠদের শুধু পদবির মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে নতুন প্রজন্মের কাছে ভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপন করতে। এ জন্যই আমাদের এই প্রয়াস। ভাবতে ভালো লাগছে আমাদের এই দাবি বাস্তব রূপ নিচ্ছে।’ এ ছাড়া ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার প্রবেশপথে তোরণ নির্মাণেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসন এ তোরণ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।

বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের স্ত্রী মিলি রহমান তাঁর স্বামীর জন্মস্থানে নেওয়া নানা উদ্যোগ সম্পর্কে বলেন, মতিউর রহমান দেশের জন্য প্রাণ উত্সর্গ করেছেন। স্বাধীনতার ৩৬ বছর পর গ্রামবাসী মতিনগর নামটি গ্রহণ করে এ দেশের সব মুক্তিযোদ্ধাকে যেন বরণ করে নিল।

বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ১৯৪১ সালের ২৯ অক্টোবর ঢাকা শহরের ১০৯ নং আগাসাদেক রোডের নিজ ‘মোবারক লজ’-এ জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৩ সালের জুন মাসে তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে কমিশন লাভ করেন।

১৯৭১ সালে তিনি করাচির পিএএফ বেস মাসরুরে সিনিয়র পাইলট ইন্সট্রাক্টর ও সেফটি অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য মতিউর ৭১ সালের ২০ আগস্ট করাচির মৌরিপুরের বিমানঘাঁটি থেকে টি-৩৩ প্রশিক্ষণ বিমান ছিনতাই করে ভারতে পালিয়ে আসার সময় শহীদ হন। গত বছর তাঁর দেহাবশেষ দেশে এনে সমাহিত করা হয়।

সূত্র: ১৬ ডিসেম্বর, ২০০৭ সালের বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত