এখনো গেল না আঁধার,
নিভে গেল তমোহর।
এখনো গেল না আঁধার,
চলে গেলেন বীরশ্রেষ্ঠ
বঞ্চিতজনের বন্ধু—,
কমরেড নূরুল ইসলাম।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে
সমবেত ভক্ত জনতার
সমর্পিত ফুল আর
বেদনার অশ্রুজলে ঢাকা—
পাশাপাশি দুইটি কফিন।
কফিনের একটিতে পিতা,
অন্যটিতে পুত্রের মরদেহ।
শহীদ চত্বরে অদ্যাবধি
এমন করুণ দৃশ্য
কখনো দেখেনি কেহ।
শোকের পতাকা হয়ে
আকাশে উড়ছে কিছু কাক।
তলে স্তব্ধ শহীদ মিনার—,
নতমুখে দাঁড়িয়ে নির্বাক।
জীবনের সমস্ত সঞ্চয়
মুহূর্তে হারিয়ে নিঃস্ব—,
বাকরুদ্ধ রুবী রহমান।
যেন শিলীভূত নিথর প্রতিমা—
জাড্যদেহ,—দৃষ্টি অশ্রুহীন।
চোখে তাঁর নির্বিকার,
নিরুত্তর কাঠের কফিন।
কবিকে সান্ত্বনা দেবে কে?
দীর্ঘ অদর্শন শেষে
যুগল কফিনে ঝুঁকে
কবি দেখলেন, পাশাপাশি
একজোড়া অগ্নিদগ্ধ মুখ।
একটিতে স্বামী,
অন্যটিতে পুত্র তমোহর।
শিয়রে দাঁড়িয়ে থেকে
তাঁর নিজকেও মৃত মনে হয়।
মাঝে মাঝে ভুল হয়ে যায়,
কোনটিতে যেন কে?
আকাশের তারার সভাতে
পুচিকেও নিয়ে গেলে সাথে?
স্বামীশোক তবু সহ্য হয়,
কালক্রমে থিতু হয়ে আসে।
পুত্রশোক চিরস্থায়ী, তারে
মাতৃমন পারে না বহিতে।
হায়রে মায়ের প্রাণ! ভবে,
পুত্রস্মৃতি বহে সে নীরবে।
যদি পুত্ররত্ন দিয়েছিলে বিধি,
কেন কেড়ে নিলে তমোহর?
নিরাশ আঁধারে খোদা, কেন
দিলে ক্ষমাহীন অমার জহর।
এ কাল-অগ্নি জ্বালিয়াছে যারা,
দান্তের নরকে নিশ্চিত
দগ্ধ হবে তারা।
হে দৈত্যজয়ী, বীর বজ্রপাণি,
পুষ্পচ্ছলে তাঁরি অগ্নি
দাও আজি মোর হাতে আনি।
সূত্র: ১৬ ডিসেম্বর, ২০০৮ সালের বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত