বিজ্ঞাপন
default-image

ঢাকার একটি হোটেলে ৪৮ ঘণ্টারও বেশি সময় আটকে রাখার পর সামরিক কতৃ‌র্পক্ষ ৩৫ জন বিদেশি সাংবাদিককে গতকাল (২৭ মার্চ, ১৯৭১) পূর্ব পাকিস্তান থেকে বের করে দিয়েছে।

উত্তর ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে বের হলে তাঁদের গুলি করার হুমকি দিয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। সাংবাদিকেরা হোটেল থেকে দেখতে পেয়েছেন, পূর্ব পাকিস্তানি বিদ্রোহীদের সমর্থনকারী নিরস্ত্র বেসামরিক লোকজনকে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা গুলি করছে। করাচির উদ্দেশে সাংবাদিকদের উড়োজাহাজে তোলার আগে নিউইয়র্ক টাইমস -এর সংবাদদাতা সিডনি শ্যানবার্গসহ অন্য সাংবাদিকদের তল্লাশি চালানো হয়। তাদের নোট বই, ছবির ফিল্ম ও ফাইল বাজেয়াপ্ত করা হয়।

বহিষ্কৃত সাংবাদিকেরা যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, কানাডা, ফ্রান্স, জাপান, রাশিয়ার সংবাদপত্রসহ অন্যান্য গণমাধ্যমে কর্মরত।

ঢাকায় অবস্থানকালে সাংবাদিকদের সংবাদ পাঠাতে বা কূটনৈতিক মিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বাধা দেওয়া হয়েছে।

সিডনি শ্যানবার্গ বলেছেন, যখন সাংবাদিকদের আবাসন ইন্টারকন্টিনেন্টাল এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেলকে জিজ্ঞেস করা হয়, বিদেশি সাংবাদিকদের কেন চলে যেতে হবে? তিনি জবাবে বলেন, ‘সেটা আমাদের ব্যাখ্যা করার কথা নয়, এটা আমাদের দেশ।’

তারপর তিনি ঘুরে তাকালেন এবং অবজ্ঞার হাসি হেসে বললেন, ‘আমরা চাই আপনারা চলে যান। এখানে থাকাটা আপনাদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। ব্যাপারটা হবে খুব রক্তাক্ত।’

দ্য টাইমস -এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক এ এম রোজেনথাল প্রতিবাদ জানিয়ে পাকিস্তান সরকারের কাছে একটি টেলিগ্রাম পাঠান:

‘ঢাকা থেকে নিউইয়র্ক টাইমস -এর সংবাদদাতা সিডনি শ্যানবার্গ এবং আরও ৩০ জন বিদেশি সংবাদদাতাকে বহিষ্কারের অপ্রত্যাশিত ও নজিরবিহীন ঘটনায় আমরা বিস্মিত। এটি আন্তর্জাতিক সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নীতিমালার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

‘শ্যানবার্গ ও অন্যদের ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে হুমকির মুখে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে এবং তাঁদের জানানো হয়েছে যে সাংবাদিক হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য তাঁরা যদি হোটেল ভবনের বাইরে যান, তাহলে তাঁদের গুলি করা হবে।

‘শেষ পর্যন্ত সাংবাদিকদের সব কাগজপত্র ও ফিল্ম বাজেয়াপ্ত করে তাঁদের বের করে দেওয়া হয়। আমাদের কি বিশ্বাস করতে হবে যে এটা সামরিক কতৃ‌র্পক্ষের একটি ভুল মাত্র? আমরা বিশ্বাস করি, আপনাদের সরকার অবিলম্বে এই ভুল শোধরানোর ব্যবস্থা নেবে।’

সূত্র: ২৬ মার্চ ২০১০ প্রথম আলোর "স্বাধীনতা দিবস" বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত