বিজ্ঞাপন
default-image

তাহেরুন মাঝে মাঝে হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করে, কী কচ্ছেন বীরপত্তিক নুরুদ্দিন? ভাত খাবেন এলা?

-কী রান্ধিছো?

-লাফা শাক রান্ধিনু আর শিদলের ভত্তা বানানু।

-মুই এলা ভাত খাম। ভাত দে।

ভাত খাওয়ার চিন্তায় নুরুদ্দিনের চোখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, শিশুর মতো সরল হাসিতে মুখমণ্ডল উদ্ভাসিত হয়-এই মুহূর্তে যারা ওকে দেখে তারা হিসাব মেলাতে পারে না যে, এই লোকটি মুক্তিযুদ্ধের সময় একজন দুঃসাহসী যোদ্ধা ছিল। জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করে মানুষের চোখের সামনে বিস্ময়ের মানুষ হয়ে গিয়েছিল। স্বাধীনতার পর ও বীরপ্রতীক খেতাব পেয়েছিল। তখন গাঁয়ের লোকে ওকে ডাকত বীরপত্তিক নুরুদ্দিন, এখন আর কেউ সেই গৌরব নিয়ে ডাকে না, শুধু তাহেরুন ভোলে না, মাঝে মাঝে এই নামে ডেকে ওকে সেই সময়ের কথা মনে করিয়ে দেয়। গভীর সুখের অনুভবে ওর বুক ভরে যায়। মনে করে ওটাই ওর সঞ্চয়। গরিব মানুষের টাকা-পয়সার সঞ্চয় থাকে না, তাতে কী, এই স্মৃতিই ওর টাকা-পয়সার সঞ্চয়। অনেক মূল্যবান, কোনো চোরই চুরি করতে পারবে না।

তখন তাহেরুন সানকি বোঝাই ভাত নিয়ে আসে। ভাতের ওপরে লাফা শাকের ঝোল আর শিদলের ভর্তা। গরম ভাত দেখে জিভে পানি আসে নুরুদ্দিনের। এত যে খিদে লেগেছে, ভাত দেখার আগে তা বোঝেনি, মাঝে মাঝে তো পেটের খিদেকে নুড়ি-পাথরের নিচে চাপা দেয়, অভিমানভরা কণ্ঠে নিজেকে বলে, মুই তো দুই টাকার মজুর, মোর ভোক লাগবে কেন? এখন তাহেরুনের হাত থেকে সানকিটা নিজের কোলের ওপর টেনে নিতে নিতে বলে, তোর সনকি লিআয়, মোর সাতে ভাত খা।

তাহেরুন নিজের সানকিতেও ভাত বেড়েছিল, সেটা চুলোর পাড় থেকে নিয়ে আসে। পাতিল খালি, দুজনের পেট ভরবে এমন অনুমান করেই রান্না করে ও। ওর হিসাবের মাত্রাটি একদম ঠিক, একটুও এদিক-ওদিক হয় না। নুরুদ্দিন বউয়ের এই দক্ষতায় মুগ্ধ। বলে, তুই ক্যাংকু করলু এডা? তাহেরুন নূরুদ্দিনের এসব প্রশ্নের উত্তর দেয় না। ও জানে, পুরুষ মানুষের এসব বোঝার সাধ্য নেই, কোথাও কোথাও ওদের বোঝার ঘাটতি আছে, যেটা ওরা স্বীকার করতে চায় না। তাই ও প্রসঙ্গ এড়িয়ে চুপ করে থাকে। তবে ও নুরুদ্দিনের সঙ্গে বসে ভাত খেতে ভালোবাসে। ওর মা-খালারা স্বামীর খাওয়া শেষ হলে ভাত খেত। এমন ব্যবস্থা ও ভাবতেই পারে না। খেতে খেতে দুজনের যে কত কথা হয়, হাসাহাসি হয়, এটা ও কখন পেত? সময় কোথায়? সারা দিন চলে যায় পথের ধারে বসে কাজ করে, ঘরে ফিরে থাকে রান্নাবাড়ি, লেপাপোছা, ধোয়ামোছাসহ কত কাজ! তাই ভাত খাওয়ার সময়টি ওদের দুজনের বিনোদনের সময়। খানিকটুকু আনন্দ।

সানকি নিয়ে বসতে বসতে তাহেরুন দেখতে পায় বীরপ্রতীক নুরুদ্দিনের ঘাড়টা নুয়ে পড়েছে, হাত ডুবে গেছে ভাতে, কারণ নুরুদ্দিন গরম ভাতে পানি ঢেলে দিয়েছে। লোকটি এমন করে খেতে মাঝে মাঝে ভালোবাসে, যখন মেজাজ ভালো থাকে ঠিক তখন। কারণ তখনই ও বুঝতে পারে যে, ও দু টাকার মজুর এবং মজুরের কপালে পান্তা ভাত ছাড়া অতিরিক্ত আর কী জুটবে? স্বামীর এমন ধারণার কথা জানে তাহেরুন এবং মনে করে নুরুদ্দিনের এই ধারণাটি ঠিক। যে মানুষ সাহস নিয়ে যুদ্ধ করে, যার সাহসের জন্য বীরপ্রতীক খেতাব জোটে, সে তো সঠিক সিদ্ধান্তই নেবে। তার ভুল হবে কেন? সে ভুল করতেই পারে না। এই মুহূর্তে তাহেরুন নুরুদ্দিনের সানকির দিকে তাকিয়ে বলে, মুইও পান্তাভাত খাম।

-খা। নুরুদ্দিন মাথা না তুলেই বলে। ও বেশি কথা বলতে পারে না। মুখভর্তি ভাতের দলা দাঁতের নিচে ফেলে চাবায়।

তাহেরুন নিজের সানকিতে পানি ঢেলে দিলে গরম ভাত গবগব শব্দ করে এবং ধোঁয়া ওঠে। বেশ লাগে দেখতে, দুজনে সেদিকে তাকায়। তাহেরুন খিলখিল হাসিতে ভেঙে পড়ে বলে, মোর সনকিডা নদী হইচে। ডাহুক নদী।

নুরুদ্দিন সঙ্গে সঙ্গে সায় দেয়, ও নিজেও হাসতে থাকে, এখন ওর মুখগহ্বর শূন্য, ভাতের দলা পেটে চলে গেছে। তাহেরুনের সঙ্গে নিজেও গলা ছেড়ে হাসে, হাসির তরঙ্গ বাড়ির আঙিনায় ছড়ালে নুরুদ্দিন বলে, তোর ভাত গুটিক য্যান নুড়ি পাথর।

-নুড়ি পাথর! মোরা পাথরের মানুষ।

স্তব্ধ হয়ে যায় দুজনের দৃষ্টির ভাষা। সত্যি কি ওরা পাথরের মানুষ? দুজনের মাথা নেমে আসে ভাতের সানকির ওপর-ওরা গপগপিয়ে ভাত খায়, শিদলের ভর্তা খুঁটে খায় আর লাফা শাক দিয়ে ভাত মাখায়, সানকির পানিতে ভেসে থাকে শাকের কুচি, যেন বিলের শাপলার মতো লাফা শাকের কুচি ওদের চোখে একটি সুন্দর দৃশ্য ফুটিয়ে তুলেছে-বলছে, তোমরা পাথর হওয়ার দুঃখ ভুলে যাও। তোমাদের কোনো বেদনা নেই।

নুরুদ্দিন বাম হাত দিয়ে চোখের পানি মোছে। তাহেরুনও। দুজনের কেউই আজ মজুরি পায়নি। ভাটিয়া বলেছে, এ সপ্তাহের মজুরি দিতে পারবে না।

কীভাবে বীরপ্রতীকের সামনে ভরা সানকি এগিয়ে দেবে তাহেরুন? তাই ওকে চোখের পানি মুছতে হয়। আর একটু একটু করে অনেকটা সময় নিয়ে ভাত খায়। নুরুদ্দিনও ভাবে দুই কেজি চাল হাতে ধরিয়ে না দিয়ে কেমন করে বউকে বলবে, মোক ভাত দে মনার মা। মোর ভোক লাগিছে।

ভাত দেওয়া কি সহজ কথা? ভাতের কথা ভাবলে তো দুজনের পিলে চমকে ওঠে। কী সাংঘাতিক কথা, কী কঠিন কাজ, দু মুঠো ভাতের হিসাব মেলাতে মেলাতে বেলা শেষ হয়ে যায়। আর দু মুঠো ভাতের জন্য ওরা তেঁতুলিয়া-বাংলাবন্দ সড়কের ধারে বসে নুড়ি পাথরের গা থেকে বালুকণা পরিষ্কার করে পাথরের স্তূপ বানায়। ডাহুক নদী থেকে পাথর সংগ্রহ করে অন্যরা, জোয়ান ছেলেরা কিংবা তার চেয়েও ছোটরা-মহানন্দা নদী বয়ে আনে হাজার হাজার নুড়ি পাথর, ঢেলে দেয় ডাহুকে, দুই নদীতে জমে আছে কত দিনের ভালোবাসা-যে ভালোবাসা দিয়ে মানুষের এক জীবনের ক্ষতিপূরণ হয় না, আরো লাগে, আরো। উদাস হয়ে যায় নুরুদ্দিন। একটি মাত্র মেয়ে ওদের, শ্বশুরবাড়িতে আছে, বছরখানেক দেখা হয়নি মেয়েটিকে। মেয়েটি আসতে পারেনি, ওরাও যেতে পারেনি। কী আর হবে এসব আসা-যাওয়ায়, গরিব মানুষের জীবনে এত কিছু কি মানায়? ভাবতেই তাহেরুন উদাস হয়ে যায়। তারপর ভাতের শেষ লোকমাটা মুখে পুরে বলে, ভেলে দিন থাকে বেটিটারে দেখিনি-

-চল, দেখবার যাম।

নুরুদ্দিনের চোখে ঝিলিক উঠে সেটা মুহূর্তে দপ করে নিভে যায়। বিলাসিতা, মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে যাওয়া এই মুহূর্তে বিলাসিতা। ভেবে লাভ নেই, মেয়েকে দেখার ইচ্ছা এই মুহূর্তে শিকায় উঠিয়ে রাখাই ভালো। ভালোবাসার মাটির হাঁড়িটা থাক না শিকায় ভরা, নামানোর দরকার কি? দুজনে খাওয়া শেষ করে।

আসলে দুজন গতকালের ঘটনাটা ভুলতে চেষ্টা করছে। দুজনের বুকের ভেতরে আগুন-দুঃখের এবং ক্রোধের। কিন্তু কেউই কাউকে কোনো কিছু বুঝতে দেয় না, কেবলই অন্য প্রসঙ্গ খোঁজে। বিয়ের পরে তাহেরুন ভীষণ গৌরবে নুরুদ্দিনের বীরপ্রতীক শব্দটি ধরে রেখেছে নিজের ভেতর, এ গাঁয়ে আর কারো নামের সঙ্গে এ শব্দটি নেই। ও ভাবে স্বামী এবং সংসার পাওয়ার মতো এই শব্দটি ওর বাড়তি পাওয়া, গরিব মানুষের ধন। নিজের ভিটেয় ঘুমুনোর যে আনন্দ, এটাও তেমনি। জমিজিরাত সব গিয়ে দু টাকার মজুর হয়েছে তো কী হয়েছে, এই শব্দটা তো আছে। এ নিয়ে ওদের দুঃখ নেই।

বরং দুজন কাজের অবসরে হা করে কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। অনেক দূরের পাহাড়, কিন্তু দৃশ্যটি চমত্কার, রোদ ঝলমলে দিনে পাহাড়ের চূড়াটি ঝকমক করে, অসঙ্ষ্ট কুয়াশার পাতলা আবরণের ফাঁকে জমাট বরফ যেন অদৃশ্য দৃশ্যকে ঘনীভূত করার চেষ্টায় ওদের সামনে হাজির হয়। ওরা দুজন এমন সুন্দর দৃশ্যের দূরের হাতছানি দারুণ উপভোগ করে। ভাবে, ওদের জীবনে নদী আছে, পাহাড় আছে, নুড়ি পাথরের স্তূপ আছে-জমিজিরাত ভাটিয়ার কাছে বেচতে হয়েছে তো কি হয়েছে, বেঁচে থাকার জন্য যুদ্ধ করার স্মৃতি আছে। এখনো বুকভরা সাহস আছে। দরকার হলে আবারও লড়তে পারবে। দু টাকার মজুর হয়েছে তো কী হয়েছে, লড়ার সাহস তো ফুরিয়ে যায়নি।

আসলে দুজন গতকালের ঘটনাটা ভুলতে চাইছে।

তাহেরুন সানকি নিয়ে উঠতে উঠতে বলে, তোমরা পানি খাবা?

-খাম, এক খুরি দে।

তাহেরুন নিজের সানকি ধুয়ে কলসি থেকে পানি ঢেলে আনে। নুরুদ্দিন সানকি থেকে পানি অর্ধেক খেয়ে বাকিটার ভেতরে হাত ধুয়ে নেয়। লুঙ্গিতে মুছে ফেলে ভেজা হাত এবং মুখও। এখন কী করবে নুরুদ্দিন? সামনে কোনো কাজ নেই। ঘুম ছাড়া কিছু করার নেই। কিছু করার না থাকলে ভীষণ অসহায় মনে হয় নিজেকে। ও একটা বিড়ি ধরায়। তাহেরুন চুলোর ধারে গেছে, কাজ সারতে সারতে ও গুনগুনিয়ে গান গায়, ওর প্রিয় অভ্যাস। নুরুদ্দিন বিড়িতে টান দিয়ে কান খাড়া করে, বেশ মজা, ও একটা কাজ পেয়েছে, মনোযোগ দিয়ে গান শোনা এখনকার কাজ। কে বলেছে কাজ নেই, কত কাজ যে চারপাশে থাকে, শুধু খুঁজে নেওয়া মাত্র। নুরুদ্দিন উঠোনে নেমে দাঁড়ায়।

কাজ তো ওকে খুঁজতে হয়েছে, জীবন বাঁচানোর কাজ। যুদ্ধ করে ফিরে এসে হাজার রকম কাজ করেই তো বেঁচে থাকল একটা জীবন। শুনতে পায় তাহেরুনের গলা চড়ছে, বেশ লাগছে গলার টানের সঙ্গে সুরের আবহ, মনে হয় বাড়িটায় যেন সেই পাহাড়ের চূড়ায় দেখা ঝলমলে দৃশ্যটি ভর করেছে। পরক্ষণে মনে হয় ডাহুক নদীটা বোধহয় এই বাড়িতে ভর করেছে, একসময় বুক সমান পানিতে দাঁড়িয়ে যে নদীর তল থেকে ও নুড়ি পাথর তোলার কাজ শুরু করেছিল, ততদিনে বাঁচার তাড়নায় জমিটুকু বিক্রি করে দিতে হয়েছিল, এখন পাথর তোলা মানুষের দল নিয়ে পুরো নদীটা ওর বাড়িতে ভর করে।

নুরুদ্দিনের মনে হয় ওর মাথায় আকাশ নেমে এসেছে, এই পৃথিবীতে এই মুহূর্তে তাহেরুন ছাড়া আর কেউ নেই। চারদিকে তারার আলো, সেই আলোতে তাহেরুনের সুরেলা কণ্ঠ আরো মায়াবি হয়ে ওঠে। ও তখন বুঝতে পারে একজন মুক্তিযোদ্ধার জন্য ওর এত গর্ব কেন, কেন অন্যরা ভুলে গেলেও ও ভুলতে পারে না নুরুদ্দিনের বীরপ্রতীক হওয়ার অহঙ্কার। এই ভাবনার সঙ্গে সঙ্গে নুরুদ্দিন বিড়িতে জোর টান দেয়, ওর ভেতরটা উথলে ওঠে মহানন্দার মতো ও আকাশ ছুঁতে পারে এবং তারা কুড়িয়ে নিয়ে তাহেরুনের জন্য মালা গাঁথতে থাকে।

কাজ শেষ করে তাহেরুন ওর পাশে এসে দাঁড়ায়। বলে, এলা কি তোমরা নিন্দাবে?

-না। নূরুদ্দিন সজোরে মাথা নাড়ে। ওর ঘুম পায়নি। আজ রাতে ওর ঘুমুনো হবে না।

তাহেরুনও বলে, মুইও একা নিন্দামনি।

-চল, হামরা আঙ্গিনাত বসি।

তাহেরুন ঘর থেকে তিন-চারটা চটের বস্তা এনে উঠোনে বিছিয়ে দেয়। নূরুদ্দিন লুঙ্গি গুটিয়ে পা ছড়িয়ে বসে। তাহেরুন ওর পিঠের ঘামাচি খুঁটে দিতে দিতে বুকভরে বিড়ির গন্ধ টানে। এককালে ও নিজেও প্রচুর বিড়ি খেত। মনার বিয়ের সময় হঠাত্ করে ছেড়ে দিয়েছে। বিড়ি টানাটা খুব কাজের কাজ মনে হয় না এখন। নুরুদ্দিনকেও নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে, কিন্তু পারে না। লোকটা বিড়ির নেশায় পাগল। একটা শেষ হলে সেই আগুনেই আরেকটা ধরায়। তাহেরুন বোঝে যে, লোকটা এক প্যাকেট বিড়ি আজ রাতেই শেষ করবে।

আসলে দুজন গতকালের ঘটনাটা ভুলতে চাইছে।

এক সময় তাহেরুন ওর পিঠের ওপর নিজের মাথাটা ফেলে দিয়ে ডাকে, বীরপত্তিক।

নুরুদ্দিন বিড়ির ধোঁয়া উড়িয়ে দিয়ে বলে, কত দিন আগত যুদ্ধ হয়েছিল তোর মনে আছে?

তাহেরুন হিসাব না করে তুখোড় স্মৃতির ক্ষীপ্রতায় বলে, সাতাইশ বছর।

নূরুদ্দিন হা-হা করে হাসে। হাসতে হাসতে কাশি ওঠে। কাশতে কাশতে বলে, ভাটিয়া মোক যুদ্ধের কথা ভুলে যাবার কয়।

তাহেরুন নুরুদ্দিনের শোকে মুখ থুবড়ে পড়ে না। ভুলে যেতে বললে তো ভুলে যাওয়া যাবে না। যুদ্ধ অত ছোট জিনিস নয়। তাহেরুন নুরুদ্দিনের বলাটা গায়ে মাখে না। নুরুদ্দিন আকস্মিকভাবে উঠে দাঁড়িয়ে ওর হাত ধরে বলে, চল, নদীর ডাঙ্গাত যাই।

তাহেরুন সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়। সন্ধ্যারাতে নদীর ধারে গেলে শরীর জুড়োবে। বিয়ের পরে ওরা এমন করে অনেক রাতে বাড়ির বাইরে চলে যেত। তখন নুরুদ্দিনের বয়স ছিল ছাব্বিশ, ওর আঠারো।

তারপরের দিনগুলো খুব দ্রুত পাল্টেছে।

যুদ্ধ করে ফিরে এসে পেয়েছিল ধু-ধু ভিটে। কাউকে কিছু না বলে যুদ্ধে চলে গেলেও রাজাকাররা ঠিকই বুঝেছিল এবং পাক আর্মির কানে উঠিয়েছিল ওর যোদ্ধা হওয়ার খবর। আর্মি পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে ভিটে, বাবা-মা ও ছোট চার ভাইবোনকে ডাহুক নদীর ধারে নিয়ে গুলি করে নদীতে ফেলে দিয়েছিল।

যুদ্ধ শেষে ফিরে এসে প্রথমে শূন্য ভিটেয় দাঁড়িয়ে কাঁদেনি নূরুদ্দিন। দেখেছিল চারদিক খোলা, আশপাশের ঘরগুলো নেই, যারা পালিয়ে যেতে পেরেছিল তারা ফিরে আসতে শুরু করেছে। সেদিন মানুষ চোখে পড়েনি নুরুদ্দিনের, চোখ পড়েছিল দূর পাহাড়ের ঝলমলে চূড়া। দেখে থ হয়ে গিয়েছিল ও, আশ্চর্য এমন করে কোনো দিন ওই পাহাড়ের চূড়া দেখা হয়নি। সেদিন ও বুঝতে পেরেছিল, স্বাধীনতার সত্য এমন, অনেককে হারাতে হয়।

এদিকে মানুষের ভিড় জমে ওর শূন্য ভিটায়। তেঁতুলিয়ার ধামনগর তিরনইহাটের মুক্তিযোদ্ধা নুরুদ্দিনকে আশপাশের গাঁ থেকে দেখতে আসে মানুষ। ওদের অন্তহীন কৌতূহল, প্রশ্ন। প্রশ্নের শেষ নেই। নারী-পুরুষ ওর গায়ে-মাথায় হাত বুলায়, ছোটরা বিপুল বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে, কিন্তু নুরুদ্দিনের মাথায় ঘূর্ণি, নদীটা বুঝি ওর মাথায় ঢুকেছে, নাকি পাথুরে জমি, যে জমি চাষ করতে করতে ওর বাবা জীবনীশক্তি ক্ষয় করেছিল। ওর মনে হলো পরিবারের সবার মুখ মনে করতে ওর পাথুরে জমির কথাই মনে হয়েছিল। জমি তো কথা বলে না, কিন্তু জমি ধারণ করে মানুষের দুঃখ-বেদনা-কষ্ট এবং আনন্দকেও। নুরুদ্দিন মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকে। একজন এসে ওর মাথা থেকে হাতটা সরিয়ে দেয়।

একজন প্রশ্ন করে, ক্যাংকু করা যুদ্ধ করলু?

ও ছোটদের দিকে মুখ ফিরিয়ে হাসে, মৃদু হাসি। কেমন করে যুদ্ধ করল সে কথা কি বলা যায়? বলা যায় না। বলতে গেলে ভুল হতে থাকবে। নুরুদ্দিন মাথা নিচু করে চুপ করে থাকে। খোলা মাঠের ওপর দিয়ে দূরের দিকে তাকায়। কেমন করে জীবনের চারদিক ঘিরে থাকা বেড়াটা উড়ে গেল।

আবার প্রশ্ন।

-তুই কয়জন পাকসেনা খুন করলু?

-তোর ভয় করেনি?

-হামারা মাঝে মাঝে তোর কথা ভাবিছি।

-ওহরে, তোর বাপ একডা সোনার মানুষ ছিল।

-তোর মা-ও ভালো মানষে ছিল।

-এলা হামরা তোর তানে তামান করিমু।

-কাল তোক হামরা একডা ঘর ওডায়ে দিম।

-আইজ রাইতত তুই হামার এইঠে ভাত খাবু। ভাত খায়ে এইঠে নিন্দাবি, বিহানে উঠে যাস।

-তুই কাইল নতুন ঘরত নিন্দাবি।

-মোর ঘরত চল-ভাত খাবু।

নুরুদ্দিন কারো প্রশ্নের জবাব দেয় না। শুধু বলে, মোর বাপের একটা শ্যালোমেশিনের শখ ছিল। বাপ চাইছিল মেশিন দিয়া খ্যাতে পানি দিব। ধান ফলাব। ও বাবা গো-

এতক্ষণে চিত্কার করে কাঁদে নুরুদ্দিন। ওর কান্নায় মানুষজন আরো ঘন হয়ে আসে ওর চারপাশে। ওর দম আটকে আসে, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। ও নিজের মাথা হাঁটুর মধ্যে গুঁজে রেখে শরীরে নুড়ি পাথরের অস্তিত্ব অনুভব করে, ওকে এমন পাথুরে হতে হবে-শক্ত, কঠিন এবং নীরেট।

তারপরের দিনগুলো দ্রুত পাল্টাতে থাকে নুরুদ্দিনের।

গ্রামের সবাই মিলে ঘর তুলে দেয় ওকে। তাহেরুনের সঙ্গে বিয়ের আয়োজন করে। ওর মনে হয় দ্রুত অনেক কিছু ঘটে যাচ্ছে। উপার্জনের কী ব্যবস্থা হবে ভাবতেই তাহেরুন চোখ বড় করে মাথা নাড়িয়ে বলে, ক্যানহে, জমি চাষ করো।

নুরুদ্দিন চুপ করে থাকে। ও জানে এখানকার পাথুরে জমি একফসলি। শুধু আমন ধানের আবাদ হয়, বোরো হয় না। বোরো চাষের জন্য সেচের ব্যবস্থা করা লাগে, কিন্তু শ্যালোমেশিন ছাড়া সেচের ব্যবস্থা হবে না। এক ফসল দিয়ে কি সংসার চলবে? সামনে তো ঘরে নতুন মানুষ আসবে। তখন কী হবে? সন্তানের কথা ভাবতেই ওর মুখে মৃদু হাসি খেলে যায়।

তাহেরুন কৌতূহলী হয়ে বলে, তোমরা হাসেন ক্যানে?

-এমনি।

-কিসের তনে হাসেছেন, কহেন?

তাহেরুনের জোর দাবি শুনে নুরুদ্দিন হো-হো করে হাসে। হাসতে হাসতে বলে, তোর কোলে ছোয়া হবে। এতানে মোর খুশি লাগেছে।

তাহেরুন গভীর আনন্দে ওকে জড়িয়ে ধরে। নুরুদ্দিনের মনে হয় যুদ্ধ করা মানুষের এমন আনন্দ প্রাপ্য হয় যার কথা ভাবলে, জমি অল্প খুঁড়লে যে পাথরের স্তর পাওয়া যায় সেটা আর সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। ঝাঁপিয়ে পড়ে কাজ করতে ইচ্ছে হয়। তাহেরুন বুকের ভেতর থেকে মুখ তুলে বলে, মুই ছোয়া পিঠত লয়ে ঠিক বিচন ওকড়াবো। ওয়া গাড়িব। মোর খুশি লাগতাছে। মোর ছোয়া নয়া চালের ভাত খাবে।

এসব কথা শেষে প্রবল জড়াজড়িতে দুজনের ঘরে আলো ঢোকে। নুরুদ্দিনের জীবনের হিসাবে ভুল হবে না বলে ধারণা হয়।

কিন্তু ইচ্ছেমাফিক জীবন চালানো আর হয়ে ওঠে না নুরুদ্দিনের। তাহেরুনের কোলজুড়ে সন্তান আসে ঠিকই, কিন্তু একফসলি আবাদে জীবন চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। জমি চাষের স্বপ্ন ভুলে ও ডাহুক নদীতে বুক সমান পানির নিচ থেকে পাথর ওঠানোর কাজ শুরু করে। লোহার শিক দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নদীর নিচে কোথায় পাথর আছে তা খুঁজে বের করে বেলচা দিয়ে পাথর ছেঁচে তুলে টুকরি ভরে মাথায় করে ডাঙায় ফেলে।

নুড়ি পাথরের স্তূপ জমে ওঠে ডাঙায়-ছোট-বড় আকারের স্তূপ নদীর পাড়ে পাহাড়ের দৃশ্য তৈরি করে। নুরুদ্দিন এভাবে পাহাড় চিনতে শুরু করে, নিজেদের তৈরি করা পাহাড়, কিন্তু মালিক ওরা নয়। ভাটিয়া মহাজনরা সে পাহাড় কেনে। আর একদল লোক চালুনি দিয়ে সে পাথরের গা থেকে বালি পরিষ্কার করে। আকার অনুযায়ী ভাগ করা হয় পাথর-বড়, মাঝারি, ছোট-কী সুন্দর দেখতে! কখনো আকার দৃষ্টি কাড়ে, কখনো রঙ, কখনো সবটা মিলিয়ে। পিঠে বাচ্চা বেঁধে রেখে পাথর ভাঙার কাজ করে তাহেরুন।

ফসলের স্বপ্ন ও আর দেখে না। জমিজিরাত যেটুকু ছিল সংসারে মুখ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটুকু বেচে খেতে হয়েছে, এখন বাকি ভিটেটুকু। ক্লান্ত তাহেরুন কাজের ফাঁকে গাছতলায় গিয়ে বসে। নুরুদ্দিনও পাশে এসে বসলে ও বিষণ্ন হাসি হেসে বলে, বীরপত্তিক, মুই পানি খাম।

নুরুদ্দিন নদী থেকে পানি এনে ওকে দেয়। ঢকঢক করে পানি খায় তাহেরুন। ওর বুকটা তৃষ্ণায় বুঝি পাথুরে জমি হয়ে গেছে, পাথুরে জমি তো এক মুহূর্তে সব পানি শুষে ফেলে। জীবনটা কেমন করে যেন কেমন হয়ে গেল, তবু বিভ্রান্ত হয় না নুরুদ্দিন। ভাবে, জমির নিচের পাথরের চেয়ে নদীর পাথর অনেক সুন্দর, তবু তো পাথর তোলার কাজ পেয়ে ও নিজে গ্রামে থেকে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। নইলে দিনমজুর হয়ে শ্রম বিক্রির জন্য যেতে হতো অন্য কোথাও। নিজ গ্রাম ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে চায় না নুরুদ্দিন। মনে হয় তাহলে স্বাধীনতার স্বপ্ন অসঙ্ষ্ট হতে থাকবে। যে যুদ্ধটা করেছে তার অনুভব এই পাথুরে জমিতে দাঁড়িয়েই ও বুকের ভেতরে রাখতে চায়-এই নদী, মাঠ-প্রান্তর, পথঘাট এবং মানুষের দল ওর সামনে দৃশ্যমান থাকে আপনজনের মতো, যা ও জন্মের পর থেকে দেখেছে, যার মধ্যে ওর বাবা-মায়ের ঘরগেরস্থি ছিল, যেটা স্বাধীনতার জন্য দান করতে হয়েছে। এই মূল্যের বাইরে গিয়ে ও উদ্বাস্তু হতে চায় না। উদ্বাস্তু হওয়া মানুষকে ও ঘৃণা করে।

ভাটিয়া মহাজন, যারা অন্য জেলা থেকে এসে এখানে পানির দরে জমি কিনেছে, তারা ওর দু চোখের বিষ। ওরাও উদ্বাস্তু। নিজের ঠাঁই খেয়ে ফেলে অন্য জেলায় এসেছে মান কিনতে। এদের একজন আবার ওকে সহ্য করতে পারে না। যখন জেনেছে নুরুদ্দিন মুক্তিযোদ্ধা বীরপ্রতীক, সেদিনই বলেছিল, বীরপত্তিক না ছাই, যতসব চালাকি, মোরা এগলা বুজি।

একদিন নদীর ডাঙায় দাঁড়িয়ে হাসমতের গলা দু হাতে চেপে ধরে সে বলেছিল, আর এই রকম কথা কইলে মাথাটা ফাটায়ে দিম। শালা, কুত্তার বাচ্চা। মোর জমিনত আসে ভাটিয়া হইছিত। নিজের জমিন নাই তোর, পরের জমিত আসে ঘর উডাইছিস। ভাটিয়া শালার পুত তোর কল্লা চাবায়ে খাম।

নুরুদ্দিন গলার রগ ফুলিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বলে, তুই যুদ্ধ করিসনি, স্বাদীন দ্যাশ পাইছিস, এলা হামরা পথের কাঁটা হইছিত, না? আরো যুদ্ধ করিম, হয় তুই থাকিব, না হয় হামরা থাকিম।

হাসমত সেদিন কথা বাড়ায়নি। ও যুদ্ধের সময় ময়মনসিংহে রাজাকার ছিল, টাকা-পয়সা লুটপাট করে ভয়ে পালিয়ে এসেছে এখানে। ওকে পথ দেখিয়েছে হমরত রাজাকার, ওর আত্মীয়। এখন ওরা দলে ভারী হতে যাচ্ছে।

এভাবেই তো দিন পার হয়। কখনো মুখোমুখি রুখে দাঁড়িয়ে, কখনো আর একটি যুদ্ধের কথা ভেবে। এর মধ্যে জীবিকার জন্য পাথরের পাহাড় বানিয়ে অন্যদের ডেকে বলেছে, দ্যাখ, মুই হিমালয় পব্বত বানাইছু।

ইদানীং হাসমতের বাড় বেড়েছে। ওর দলের লোক মন্ত্রী হয়েছে। নুরুদ্দিনের সামনে বুক টান করে বলে, ওইসব যুদ্ধফুদ্ধ ভুলে যাও। বীরপ্রতীক লেবাস পরে কাজ হবে না।

এখনকার বয়সী নুরুদ্দিন হা করে তাকিয়ে থাকে। ভাবে, যারা ওকে সেই সময়ের কথা ভুলতে বলে তারা কি এই দেশের মানুষ? নতুন করে বিষয়টি ওকে ভাবাচ্ছে। ওর বাড়ি ফিরতে দেরি হয়। ও ডাহুক নদীর ধারে বসে থাকে। আর তাহেরুন প্রতিবেশী গেদুর মাকে বলে, বেলা গেল মুই ভাত চড়াম, মোর ভাতার এলা বাড়ি আসিবে।

-তোমরা য্যান লোকটারে কী করে ডাকেন?

-বীরপত্তিক। তাহেরুনের মুখ উদ্ভাসিত হয়ে যায়। এই তো দুপুর বেলা পর্যন্ত দুজন পাথর ভেঙেছে। পাথরবোঝাই ট্রাক চলে গেছে শহরে। তাহলে লোকটা আসছে না কেন? তাহলে কি হাসমত ওকে আবার বলেছে, এলা হামরা ক্ষমতা পাইছি। তুই বেশি বাড়াবাড়ি করলে তোর ঘাড় মটকায়ে দিম, হালার পুত।

ভাত রান্না শেষ হলেও নুরুদ্দিন ঘরে ফেরে না দেখে তাহেরুন ওকে খুঁজতে বের হয়। ডাহুক নদীর ধারে এসে দেখতে পায় নুরুদ্দিন একা বসে আছে। ও কাছে গিয়ে বসে। মৃদু স্বরে বলে, বীরপত্তিক।

ও তাহেরুনের দিকে ফিরে না তাকিয়ে বলে, আর একটা যুদ্ধ করিম।

-কী কহিলেন?

-ঠিকই কহিলাম।

-তোমরা বাড়িত চলেন, ভাত খাবেন।

-হ ভাত খাম, ভোক লাগছে। মোক বেশি করে ভাত দেব। য্যান শরীরের শক্তি শ্যাষ না হয়।

সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারার এক অদৃশ্য আনন্দে নুরুদ্দিন গভীর ঘুমে সে রাত পার করে দেয়।

কয়েক দিন পর পাথর ভাঙার সময় কয়েকজন যুবক ছেলে নূরুদ্দিনের কাছে এসে দাঁড়ায়। ও পাথর ভাঙা থেকে নিজেকে নিবৃত্ত করে না। কারণ মজুরির হিসাব হবে ফুট হিসাবে মেপে। কাজ বন্ধ রাখা লস। তাহেরুন ওর পাশে বসে কাজ করছে। ওর হাতের হাতুড়ি থেমে গেছে। একজন ছেলে পিঠের ব্যাগটা নামিয়ে বলে, আপনি এই গাঁয়ের মুক্তিযোদ্ধা, বীরপ্রতীক নুরুদ্দিন?

তাহেরুন ত্বরিত উত্তর দেয়, ঠিক কহাছেন।

নুরুদ্দিনও চোখ তুলে তাকায়। ছেলেটি বলে, আমি বিবিসিতে কাজ করি। আপনার একটি সাক্ষাত্কার নেব।

-ক্যানে?

-আপনি যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। এখন আপনি কেমন আছেন?

-যুদ্ধ তো শ্যাষ হয়নি। নুরুদ্দিনের নির্বিকার কণ্ঠ।

-হয়নি?

-না। ও দৃঢ় কণ্ঠে বলে। কারো দিকে তাকায় না।

-তাহলে...

আমতা আমতা করে সাংবাদিক। ওর বিস্ময় ফুরোয় না। কী বলছে মুক্তিযোদ্ধা নুরুদ্দিন তা বুঝতেও ওর সময় লাগছে। এলাকার নানাজনের সাক্ষাত্কার নিয়ে ও একটি রিপোর্ট করবে বলে এসেছে। গাঁয়ের লোকজন দূর থেকে নুরুদ্দিনকে দেখিয়ে দিয়েছে। নুরুদ্দিনের মুখের সামনে ছোট ক্যাসেটটা ধরে রাখা যুবক বলে, আপনি যেন কী বলছিলেন?

-কী কইছিলাম? কইছিলাম যে হামরা এলা সিজ ফায়ারে আছু।

-সিজ ফায়ার? তরুণ সাংবাদিক চিত্কার করে ওঠে।

নুরুদ্দিন মৃদু হেসে আবার পাথর ভাঙায় মনোযোগী হয়। সাংবাদিকের বিস্ময়কে ভ্রূক্ষেপ করে না। পাথর ভাঙার ঠুকঠুক ধ্বনি চারদিকে বাজতে থাকে।

সাংবাদিক আবার বলে, আপনি কী বললেন? আমরা এখন সিজ ফায়ারে?

-যুদ্ধের ট্রেনিংয়ের সময় এই কথাটা শিখেছু। এলা এইটার মানে বুঝেছু। আর একটা যুদ্ধ লাগিবে।

বিমূঢ়সাংবাদিকঅপারবিস্ময়েনুরুদ্দিনকেদেখে-সবচুল পেকে গেছে, হাতের মোটা রগ দৃশ্যমান, বুকের হাড় গোনা যায়।ছেঁড়া গেঞ্জি সবহাড় ঢাকতে পারেনি।একটু পরে ঘাড় ঘুরিয়ে তাহেরুনকে কী যেন বলে ওরাতা

সূত্র: ২৬ মার্চ ২০০৪ প্রথম আলোর "স্বাধীনতা দিবস" বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত