শাদার বিরুদ্ধে কেউ মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না!
শাদার সামনে সব ম্লান আর ফিকে মনে হয়,
সব রঙ মুছে গিয়ে শুধুমাত্র শাদা জেগে রয়—
শুধু শাদা বর্ধমান, অন্য রঙ কখনো বাড়ে না!
শাদার প্রতাপে লাল কেন যেন ফ্যাকাশে দারুণ,
কালো তার আত্মধ্বংসী গর্ত জুড়ে শাদাকে ফোটায়—
অত্যন্ত প্রকট ক’রে তুলে ধরে, চোখের সম্মুখে!
দেয়ালে ম্যুরালে ছিলো স্পষ্টতই কালোর আধিক্য,
তবু কেন শাদা এসে গ্রাস করে সম্পূর্ণ দেয়াল!
কালোর আধিক্যটুকু মনে হয় হাহাকারময়
অন্তহীন অন্ধকার,—অস্তিত্বের সমূহ সংকট!
কালো আর রঙ নয়, গাঢ় অন্ধকারের প্রতীক।
একইভাবে এসে পড়ে, ক্রমান্বয়ে, সবুজ ও নীল—
এই দুই রঙ মিলে তৈরি করে অস্বচ্ছ আঁধার।
রাত্রিবেলা হলুদ তো সর্বদাই শাদার দোসর!
হলুদের কথা তাই বস্তুতই এখানে আসে না।
আঁধার দ্যোতনাময়: তবু এই ক্ষুব্ধ ঘর—রুদ্ধ
চেতনার দরোজাটি করাঘাতে কখনো খোলে না!
চতুর্দিকে শাদার সন্ত্রাস—অন্য রঙ নিরুপায়
দেয়ালে ম্যুরালে বন্দী—জানা নেই ডানার উড়াল!
অস্তিত্বের সমস্যাই এই ক্ষণে বিচার্য বিষয়!
উপর্যুক্ত প্রেক্ষাপটে অবশ আঙুল থেকে ঝ’রে
প’ড়ে যায় অকস্মাত্ সৃষ্টিশীল তুলি ও পেন্সিল—
সন্ত্রাসপ্রবণ শাদা গ্রাস করে অস্তিত্বের মূল!
প্রিয় পানীয়ের পাত্র হাত থেকে খ’সে প’ড়ে যায়—
ঝনঝন, ক্বিন ক্বিন শব্দে ভাঙে কাচের তৈজস!
অসংখ্য কাচের টুকরো মেঝেময়—বীয়ারের ফেনা
গড়ায়ছড়ায় সবদিকে—নিথর, নিস্পন্দ, স্তব্ধ
ঘরশুদ্ধ লোক—অবরুদ্ধ! বিস্ময়ের ঘোর কারু
কাটে না সহজে! কাচের আধার সব ভেঙে পড়ে
অনিবার্যভাবে! আমার চাদ্দিকে দেখি ভাঙা গ্লাস,
পানীয়ের পাত্রগুলো গুঁড়ো হ’য়ে গড়াচ্ছে কার্পেটে,
ভেসে যাচ্ছে বীয়ারের ফেনা—বোতলের বন্দী সব
মদিরা ও জল মিলেমিশে স্রোতোবেগে ধাবমান
উদ্দাম নৃত্যের তালে আধখোলা দরোজার দিকে!
ভেসে যায় শূন্যতার ক্যান, টেবিল-চেয়ার ভাসে,
পোড়া সিগ্রেটের টুকরোসহ অ্যাশট্রেও ভেসে যায়—
জুতো ও স্যান্ডেল ভাসে, দেশলাই, পেয়ালা, পিরিচ;
ট্যোমাটো কেচাপ, সস, সালাদের টুকরোগুলো ভাসে!
দরোজা অনেক দূর—স্রোতে কাঁপে সমূহ কপাট—
স্তূপীকৃত ভাঙা কাচ ফেলে নগ্নপায়ে কখনো কি
পৌঁছুতে পারবো আমি, স্থির পায়ে, দরোজা অবধি?
সূত্র: ২৬ মার্চ ২০০৬ প্রথম আলোর "স্বাধীনতা দিবস" বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত।