বিজ্ঞাপন
default-image

ভারত সফররত সোভিয়েত সংসদীয় প্রতিনিধিদলের নেতা শ্রী ভি কুদরিয়াভেেসভ আজ এখানে বলেন, বাংলাদেশে যে সংগ্রাম চলছে, তা জাতীয় মুক্তি আন্দোলন এবং তার মধ্যে গৃহযুদ্ধের উপাদান রয়েছে।

শ্রী কুদরিয়াভেেসভ সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম সোভিয়েতের আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক সংসদীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক।

শ্রী কুদরিয়াভেেসভের উক্তিতেই প্রথম একজন সোভিয়েত নেতার কাছ থেকে বাংলাদেশের আন্দোলন জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম বলে প্রকাশ্য স্বীকৃতি লাভ করল। শ্রী কুদরিয়াভেেসভের মন্তব্য এই কারণে আরও বেশি তাত্পর্যপূর্ণ যে তিনি শুধু একজন সফররত সংসদীয় হিসেবে এ কথা বলেননি, বলেছেন সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্র ও তার সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে।

শ্রী কুদরিয়াভেেসভ বাংলাদেশের জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে গ্রহণযোগ্য হলে পাকিস্তানের কাঠামোর মধ্যে কোনো সমাধানের সম্ভাবনা বাতিল করে দেননি। তিনি জোর দিয়ে বলেন, যে সমাধানই নির্ণয় করা হোক না কেন, তা করতে হবে জনগণের ইচ্ছা, তাদের আইনসংগত অধিকার ও জাতীয় আশা-আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে।

তাঁর ধারণা, এই উপমহাদেশের ঘটনাবলির প্রতি চীন এক অযৌক্তিক মনোভাব গ্রহণ করেছে। তবে চীন-সোভিয়েত সম্পর্ক বিষয়ে তিনি আশা করেন, চীন রাষ্ট্রসংঘের সদস্য হওয়ায় এই সম্পর্ক এখন স্বাভাবিক হবে।

শ্রী কুদরিয়াভেেসভ তাঁর পূর্ব মন্তব্য সত্ত্বেও আশা করেন, ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনাবলি দুই দেশের মধ্যে কোনো সশস্ত্র সংঘর্ষ ডেকে আনবে না। তবে সংঘর্ষ হবে কি না, তা তিনি বলতে পারেন না। তাঁর মতে, ভিয়েতনাম আর মধ্যপ্রাচ্যের অবস্থা এখনো বিস্ফোরণের মুখে থাকায় পৃথিবী তৃতীয় একটা সংঘর্ষের বিলাসিতায় মাততে পারে না। তার চেয়েও বড় কথা, একবার সংঘর্ষ শুরু হলে অধিক থেকে অধিকতর দেশ তাতে জড়িয়ে পড়তে চায়। তাঁর এই মন্তব্য চীনকে উপলক্ষ্য করে কিনা, তা তিনি ব্যাখ্যা করেননি।

শ্রী কুদরিয়াভেেসভ আশা করেন, পাকিস্তান বাস্তব অবস্থা উপলব্ধি করবে এবং একটা সমাধানে উপনীত হবে। সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে, যাতে উদ্বাস্তুরা আস্থা অর্জন করে স্বদেশে ফিরে যেতে পারে। তবে কী করে সেটা করা যেতে পারে, তা তিনি বলতে পারেন না। সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্র অথবা অন্য কোনো দেশের পক্ষে তা বলা সম্ভব নয়। সমাধান নির্ণয় করতে হবে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী আর বাংলাদেশের নেতাদের।

তিনি স্বীকার করেন, যদিও সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সব রকম সামরিক সাহায্য দেওয়া বন্ধ করছে, তবু তার সঙ্গে বৈষয়িক সম্পর্ক বজায় আছে। পাকিস্তানের সঙ্গে সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বৃদ্ধি না পেলেও চলছে।...

তিনি আরও বলেন, কথায় কিছু যায় আসে না, আসল জিনিস হচ্ছে কাজ।

শ্রী কুদরিয়াভেেসভ ভারতের জনগণের স্মরণ করিয়ে দেন, তাদের শান্তির জন্য চেষ্টা করতে হবে, কিন্তু তাই বলে দেশের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে অবহেলা করা ঠিক হবে না। সব অবস্থাতেই প্রতিরক্ষা জোরদার করতে হবে।

আগ্রা থেকে ইউএনআই জানাচ্ছেন, শ্রী কুদরিয়াভেেসভ গতকাল সেখানে ভারত-সোভিয়েত সাংস্কৃতিক সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত এক সভায় বলেন, ভারত যদি আক্রান্ত হয়, তাহলে তাঁর দেশ তাকে সাহায্য করবে।

তিনি আরও বলেন, তাঁর দেশ ভারতের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা শক্তিশালী করতে চান।

তিনি এই বলে সতর্ক করে দেন, ‘সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি’ ভারত ও সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান বন্ধুত্বে ভীত হয়ে পড়েছে, তারা সম্প্রতি স্বাক্ষরিত ভারত-সোভিয়েত চুক্তির বিরুদ্ধে প্রচারকার্যে লিপ্ত হয়েছে। তিনি বলেন, পাকিস্তানি শাসকদের যুদ্ধংদেহী মনোভাবের দরুন ভারতের অখণ্ডতা যখন বিপন্ন হয়ে পড়ে, তখনই এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

আনন্দবাজার পত্রিকা, ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১

সূত্র: ২৬ মার্চ ২০১৪ প্রথম আলোর "স্বাধীনতা দিবস" বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত