বিজ্ঞাপন
default-image

লক্ষ শিশু দেখছে আকাশ অন্ধকার

উদর স্ফীত, বিস্ফারিত চোখের ধার

যশোর রোডে—বিষণ² সব বাঁশের ঘর

ধুকছে শুধু, কঠিন মাটি নিরুত্তর।

লক্ষ পিতা ভিজছে হিমেল বৃষ্টিতে

লক্ষ মাতা দুঃখ দেখে দৃষ্টিতে

লক্ষ ভাইয়ের হৃদয় শুধু যন্ত্রণা

লক্ষ বোনের নেইকো ঘরের সা®¦্বনা।

লক্ষ মাসী ভাতের জন্য যায় মরে

লক্ষ মাতুল মাতাল হয়ে শোক করে

লক্ষ পিতামহের গৃহ চূর্ণপ্রায়

পিতামহী হচ্ছে পাগল নিঃসহায়।

হাঁটছে পাকে লক্ষ পিতার কন্যারা

অবোধ শিশু ভাসিয়ে নিলো বন্যারা

লক্ষ মেয়ে করছে বমন আর্তনাদ

লক্ষ পরিবারের আশা চূর্ণ সাধ

লক্ষ প্রাণের উনিশ শত একাত্তর

উদ্বাস্ত্ত যশোর রোডে সব ধূসর

সূর্য জ্বলে ধূসর রঙে মৃতপ্রায়

হাঁটছে মানুষ বাংলা ছেড়ে কলকাতায়।

সিক্ত মিছিল হাঁটছে মানুষ নিঃসহায়

ত্রস্ত ভীত ক্ষুব্ধ বালক থমকে চায়

স্তব্ধ আঁখি শীর্ণদেহ অস্থিসার

মানববেশ এ ক্ষুধার্ত সব ফেরেশতার।

কাঁদছে মাতা উঁচিয়ে আঙুল ঐ দেখায়

দাঁড়িয়ে আছে সন্ন্যাসিনীর মতোই প্রায়

সন্তানেরা শীর্ণপদে প্রার্থনায়

পাঁচটি মাসের অন্নবিহীন যন্ত্রণায়।

দুইটি শিশু দাঁড়িয়ে আছে বৃক্ষছায়

নীরব চোখে আমায় শুধু দেখেই যায়

অন্নজোটে সপ্তাহেতে একটি বার

দুধের গুঁড়ো ক্লান্ত শিশু চায় না আর।

সব্জি বিহীন অন্ন খেয়েই কাটছে দিন

সপ্তাহেতে তিনটি দিনই অন্নহীন

দুধের ছেলে করছে উপোস মৃতপ্রায়

যা কিছু খায় করছে বমি যন্ত্রণায়।

সামনে আমার কাঁদছিলো মা অন্ন চাই,

বাংলা ভাষায় ডাক দিলো কে ‘শুনুন ভাই’

পরিচয়ের পত্র ছেঁড়া মাটির গায়

ক্যাম্প অফিসের দ্বারে স্বামী দাঁড়িয়ে ঠাঁয়।

খেলছে শিশু বানের পানি চারটি ধার

শেষ হয়েছে দেবেনা আজ খাদ্য আর

আমার ব্যাগে পয়সা—এ কি আমার পাপ

শিশুর চোখে দেখছি মোদের মৃত্যুশাপ।

হাজার বালক লাইন দিয়েছে একটি ধার

খাদ্য দেবে প্রতীক্ষাতেই দাঁড়িয়ে তার

হল্লা কিছু করছে ছেলে নিরন্তর

উঁচিয়ে লাঠি ছুটছে পুলিশ ক্রুব্ধস্বর।

এমনি করে দাঁড়িয়ে এ কোন শিশুর দল

হল্লা করে দিচ্ছে কিউ ঝড় বাদল

মাথায় নিয়ে কান্না হাসির মাঝখানে

খাদ্য কেন হচ্ছে দেয়া এইখানে

অফিস থেকে বেরিয়ে এলো একটি লোক

হাজার বালক দেখলো চেয়ে কি উৎসুক

প্রার্থনা এ? “আজ আর কোন খাদ্য নাই”

হল্লা করে হাজার ছেলে লক্ষ ভাই।

ছুটলো সবাই তাঁবুর ঘরে প্রতীক্ষায়

বসেই আছেন মাতাপিতা একটি ঠাঁয়

কঠিন খবর ছুড়লো ছেলে—খাদ্য শেষ

রুগ্ন শিশু চম্কে উঠে জীর্ণ বেশ।

মাতার কোলে নবজাতক শিশুর শব

অদ্ভুত সব রোগে এখন ভুগছে সব

দুঃখ-শোকের মদ গিলে আজ সব মাতাল

শরণার্থী শিবিরটাইতো হাসপাতাল।

সীমান্তে আজ বানের পানি তা থৈ থৈ

সব ডুবেছে, খাদ্য দেবে পথটা কৈ?

মার্কিন সব দেবতারা কোথায় আজ?

বিমান থেকে শিশুর গায়ে ছুড়ছে বাজ?

রাষ্ট্রপতি, কোথায় তোমার সৈন্যদল?

বিমানবহর নৌবাহিনী অর্থবল?

তারা কি আজ খাদ্য ওষুধ আনতে চায়?

ফেলছে বোমা ভিয়েৎনামে নিঃসহায়?

(অংশবিশেষ)

অনুবাদ: খান মোহাম্মদ ফারাবী

সূত্র: ২৬ মার্চ ২০১০ প্রথম আলোর "স্বাধীনতা দিবস" বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত