এই লেখাটিতে বর্তমান বাংলাদেশ যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ তার দুঃখগুলো বিবেচনা করব। এই বিচার কাজটিতে আমি সমঙ্ূর্ণ নিরপেক্ষ ও নিরাসক্ত দৃষ্টিতে সংশ্লিষ্ট ঘটনাগুলো যথাসম্ভব সংক্ষেপে বর্ণনা করব। সংক্ষেপে বর্ণনার কারণ আমাদের প্রয়োজন শুধু ঘটনাগুলো এবং তা ঘটার কারণগুলো গৌণ। এই লেখায় বর্ণিত ব্যক্তিদের প্রতি আমার অনুরাগ কিংবা বিরাগ নেই। পাঠক-পাঠিকাদের প্রতি আমার অনুরোধ, তারা শুধু দুঃখগুলো নিয়ে চিন্তা করবেন এবং এগুলোকে নৈর্ব্যক্তিক ভাববেন। কারণ সব দুঃখ জয় করা সম্ভব কিনা এবং এর কোনগুলো জয় করা সম্ভব ও কী উপায়ে, এসব ভবিষ্যতের ভাবনাই মুখ্য বিষয় হওয়া উচিত। অতীত ঘটনাবলির মূল্যায়ন এই কারণেই প্রয়োজন হয় এবং তার জন্য কোনো ব্যক্তির মূল্যায়ন করার আদৌ প্রয়োজন নেই।
সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা এই বাংলাদেশ। এই কারণে এ দেশে নানা জাতির আগমন হয়েছে এবং ফলস্বরূপ এ দেশ নানা সংস্কৃতির মিলন কেন্দ্র হয়েছে। ইংরেজদের আসার আগে বাংলাদেশে প্রাচ্য সংস্কৃতি ও পশ্চিম এশিয়ার ইসলামী সংস্কৃতি সম্মিলিত হচ্ছিল। ইংরেজদের শাসননীতি এই প্রক্রিয়া শুধু বন্ধই করেনি, বরং বিরোধপূর্ণ করে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রশ্নগুলো তথা অতীতকালের তর্কগুলো এখনো অমীমাংসিত। কিন্তু সেগুলোর ততটা নৈর্ব্যক্তিক আলোচনা করা প্রয়োজন, যতটা বর্তমানকে পরিবর্তন করার কাজে সহায়ক ও অপরিহার্য। অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তি ছাড়া রাজনৈতিক স্বাধীনতা কোনো সুফল দিতে পারে না। বাংলাদেশে এটা বাস্তব সত্য। অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তি কেন আসেনি সে দুঃখের বিচার এই লেখাটির উদ্দেশ্যে।
জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক কর্তৃক প্রদত্ত বক্তৃতা ‘বাংলাদেশ : জাতির অবস্থা’ থেকে একটি বাক্যের উদ্ধৃতি দিচ্ছি : ‘বাংলাদেশের মানুষ একটা জাতি। কারণ তারা একটা জাতি হতে চায়, অন্য কিছু নয়।’ নিঃসন্দেহে এটি একটি প্রশ্নাতীত সঠিক বিবৃতি। কিন্তু তার বক্তৃতাটি সমঙ্ূর্ণ পড়লে লক্ষ করা যায় যে, ‘বাংলাদেশের মানুষ’ বলতে তিনি কেবল সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাভাষী বাংলাদেশের মানুষদের ভেবেছেন। এটাই একমাত্র প্রচলিত ভুল ধারণা নয়। বাংলাদেশের মানুষ বলতে কেবল সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মাবলম্বীদেরও ভাবা হয়েছে। এই দুটি ভুলের জন্য বাংলাদেশের ভাগ্য কী হয়েছে তা বর্ণনা করা মনে করি কবির ভাষায় সহজ হবে-
‘অদৃষ্টেরে শুধালেম, চিরদিন পিছে
অমোঘ নিষ্ঠুর বলে কে মোরে ঠেলিছে?
সে কহিল, ফিরে দেখো। দেখিলাম আমি,
সম্মুখে ঠেলিছে মোরে পশ্চাতের আমি।’
-রবীন্দ্রনাথ, ‘চালক’ কণিকা
এক
প্রাকৃতিক সীমা কখনো কখনো একটি দেশের সীমা নির্ধারণ করে এবং কালক্রমে বহু কোটি লোক বংশ পরমঙ্রায় ওই সীমানায় বাঁধা পড়ে। এই মতে বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানা বর্ণনা করা যাক। বাংলার উত্তর প্রান্তে সিকিম ও হিমালয় পর্বতশ্রেণীর কাঞ্চনজঙ্ঘার শিখর এবং এই প্রান্তের পূর্বে ভুটান ও পশ্চিমে নেপাল। উত্তর-পূর্বদিকে বাংলার সীমানা উত্তর ব্রহ্মপুত্র নদের উপত্যকার পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত এবং উত্তর-মধ্য ও উত্তর-দক্ষিণ সীমানায় যথাক্রমে লুসাই ও চট্টগ্রাম আরাকান পর্বতমালা। রাজমহল থেকে যে পাহাড় আর লাল শক্ত মাটির ঢিপি দক্ষিণে ময়ূরভঞ্জ-কেওঞ্জর-বালেশ্বর হয়ে বঙ্গোপসাগর ছুঁয়েছে তা বাংলার পশ্চিম সীমান্ত। স্বাভাবিক নিয়মেই প্রাচীনকালে এই ভূখণ্ডটির একটি নাম ছিল না এবং ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলের ভিন্ন ভিন্ন নাম ছিল। কালক্রমে ইতিহাসের সরল নিয়মে বিভিন্ন অঞ্চলের আধিবাসীদের দ্বন্দ্ব ও মিলনের ধারাস্রোতে বাংলাভাষী বাংলাদেশ হলো। না না, আমিও অনেকের মতো ভুল করলাম। বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানায় আরো বাঁধা পড়ল রাজশাহী-দিনাজপুর-রংপুর-বগুড়া অঞ্চলে সাঁওতাল, ওরাওঁ এবং রাজবংশী, সিলেটে মণিপুরী, পাঙন ও খাসিয়া, ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইলে গারো ও হাজং এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমা, তংচংগা, মগ বা মারমা কুকি, লুসাই, মুরং, টিপরা, সেন্দুজ, পাংখো, বনজোগী ও খুমি। এইসব কোটি নরনারীর দেহ-মন মিলিয়েই বর্তমান বিভক্ত বাংলাদেশের সত্তা। প্রিয় পাঠক-পাঠিকা, আবার আমি অনেকের মতো ভুল করলাম। কারণ আজকের বাংলাদেশের রূপ ও চরিত্রের বিচারে বাংলাদেশ বিভক্ত হয়েছে বলা ভুল হবে। সঠিক কথাটি হচ্ছে সীমানা পরিবর্তনে বাংলাদেশের আকার সংকুচিত হয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশের আমিত্ব, ব্যক্তিত্ব ও হূদয়ের একমাত্র অধিকারী গণ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ বিশ্বসভায় সগৌরবে আসন পেয়েছে।
দুই
জনগণের আকাক্মক্ষা ছিল কিন্তু তাদের উপলব্ধিতে আসেনি যে স্বাধীন রাষ্ট্র হওয়ার পথে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়ে গেছে, সেটা হবে দ্রুততম যাত্রা এবং তাদের একটি হিংস্র সশস্ত্র বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে হবে। এর উদাহরণ হচ্ছে ২৩ মার্চ জনগণ পাকিস্তান দিবসে পাকিস্তানের পতাকা পোড়াচ্ছে এবং ইতিমধ্যেই প্রস্তুত বাংলাদেশের পতাকা ওড়াচ্ছে, অথচ স্বাধীনতা যুদ্ধের কোনো পূর্বপ্রস্তুতি নেই। আহমদ ছফার ভাষায় এর ‘পরিণতি স্বরূপ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পায়ে হেঁটে সীমান্ত পেরিয়ে আশ্রয় ভিক্ষা করতে ভারতে চলে যেতে বাধ্য হলো।’
রাশিয়ার সমর্থন নিশ্চিত করতে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যজোট গঠনের প্রয়োজনীয়তা প্রবলভাবে দেখা দেয় ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে। অবশ্য মে মাস থেকেই স্বাধীনতার সমর্থক সব কয়টি দল নিয়ে জোট গঠন বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছিল এবং এতে তাজউদ্দীনের সমর্থন ও আগ্রহ ছিল। কিন্তু মুজিব বাহিনী ও আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীর দলীয়মন্যতার কারণে বিষয়টি সহজ ছিল না। অবশেষে ৮ সেপ্টেম্বর ‘জাতীয় উপদেষ্টা কমিটি’ গঠন করা হলো। আওয়ামী লীগ থেকে চারজন এবং অন্য চারটি দল যথা ন্যাপ (ভাসানী), ন্যাপ (মোজাফফর), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি ও বাংলাদেশ কংগ্রেস থেকে একজন করে প্রতিনিধিকে জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির সদস্য করা হয় এবং তাজউদ্দীন কমিটির আহ্বায়ক হন। কিন্তু কমিটির কোনো কার্যকরী ক্ষমতা নির্দিষ্ট না করায় এবং জাতীয় ঐক্যজোট গঠন না করায় মুক্তিযুদ্ধ সমর্থনকারীদের মিলিত একটি সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে উঠল না।
ইতিপূর্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য ন্যাপ ও সিপিবি বাংলাদেশ সরকারের কাছে ক্রমাগত অনুরোধ করে আসছিল। জাতীয় উপদেষ্টা কমিটি গঠিত হওয়ার কারণে তাজউদ্দীন ন্যাপ-সিপিবি-ছাত্র ইউনিয়ন থেকে মুক্তিযোদ্ধা রিক্রুট করার সিদ্ধান্ত নিতে সমর্থ হন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধকালে কিংবা দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে তাজউদ্দীন সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা গঠনে সম্মত হননি এবং তিনি ’৭০-এর নির্বাচনী রায় অনুযায়ী মন্ত্রিসভার দলীয় চরিত্র বজায় রাখেন।
১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ মন্ত্রিসভা কর্তৃক সব মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে ‘জাতীয় মিলিশিয়া’ গঠনের পরিকল্পনার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। কিন্তু বাস্তবে দলীয় অনুগত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে জাতীয় রক্ষীবাহিনী গঠন করা হয়। অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে অস্ত্র ফেরত্ নেওয়ায় তারা স্ব স্ব যুদ্ধপূর্ব সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থায় ফিরে যেতে বাধ্য হয়, অথচ স্বাধীনতাবিরোধীদের ক্ষমা করা হয়। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তারা যে সমঙ্দ লুট করেছিল তা ফেরত্ নেওয়ার বিষয়টি মনে হয়নি।
তিন
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে এসে জনসভায় ঘোষণা করলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র, এটা ভুল। বাংলাদেশের অধিবাসী মুসলমান, হিন্দু, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ সবাই মিলিতভাবে একটি সশস্ত্র যুদ্ধে পাকিস্তান বাহিনীকে পরাজিত করে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির পত্তন করেছে এবং এই বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সঙ্গে সঙ্গে পূর্ব বাংলা বা পূর্ব পাকিস্তানের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়েছে। এটাই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ইতিহাসের গোড়ার কথা।
বাঙালিদের সঙ্গে বাংলাদেশের অন্যান্য বাসিন্দাও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। তারই খণ্ডচিত্র আঁকছি। পার্বত্য চট্টগ্রামের মং সার্কেল, যা বর্তমানে খাগড়াছড়ি, এই জেলায় মারমা, চাকমা, তংচংগা, কুকি, লুসাই, টিপরা, সেন্দুজ, পাংখো, বনজোগী ও খুমিদের বাস। মং সার্কেলের রাজা মপ্রু সেইন মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। নভেম্বর মাসের শেষ দিকে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হলে রাজা মপ্রু সেইন মিত্র বাহিনীর সঙ্গে প্রত্যক্ষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মিত্র বাহিনীর ঊর্ধ্বতন অফিসাররা রাজা মপ্রু সেইনকে অনারারি কর্নেল র্যাঙ্ক প্রদান করে তাদের একটি ট্যাঙ্ক ব্যাটিলিয়নের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে পাঠান। আখাউড়া অপারেশনে মিত্র বাহিনীর হয়ে রাজা মপ্রু সেইন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। আখাউড়া পতনের পর তিনি মিত্র বাহিনীর ইউনিটের সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসেন। আশুগঞ্জ এবং ভৈরব অপারেশনে রাজা মপ্রু সেইন অংশগ্রহণ করেন। ১৭ ডিসেম্বর রাজা মপ্রু সেইন মিত্র বাহিনীর ইউনিটের সঙ্গে শত্রুমুক্ত ঢাকা শহরে এসে পৌঁছান।
১৮ সেপ্টেম্বর ইপিআর কমান্ডার সালেক, বেঙ্গল রেজিমেন্টের মান্নান, পুলিশের হাবিলদার রজব আলী এবং ছাত্র রণজিত কুমার মোহন্ত, প্রদীপ কুমার কর ও অন্যান্যের নেতৃত্বে হিলির পার্শ্ববর্তী স্থানে পাকিস্তান বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের ভীষণ যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে বহু পাকিস্তানি সৈন্য হতাহত হয়। ঘোড়াঘাটের মুক্তিযোদ্ধা ফিলিপস (সাঁওতাল)-এর নেতৃত্বে মাইন বিস্ফোরণে পাকিস্তানি সেনাদের একটি বেডফোর্ড কার ধ্বংস হয়।
চার
হত্যা ও ক্যু, পাল্টা কু এবং পুনঃ ক্যু-এর পরে ১৯৭৫ সালের ৬ নভেম্বর তত্কালীন প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন এবং প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অতঃপর তিনি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর তিন প্রধানকে উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিযুক্ত করেন। এটা সহজেই অনুমান করা যায় যে, যদিও ঘটনাপ্রবাহের নায়কেরা সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য, কিন্তু তারা সরাসরি ক্ষমতা গ্রহণের সাহস পাননি। সায়েম একজন আইনজীবী অতঃপর প্রধান বিচারপতি এবং অরাজনৈতিক ব্যক্তি ছিলেন। দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তার আগ্রহ ও ইচ্ছা ছিল সঙ্ষ্টত বোঝা যায়। শপথ নেওয়ার দুদিন পরেই ৮ নভেম্বর তিনি প্রথম যে প্রজ্ঞাপন জারি করেন তাতে ঘোষণা দেওয়া হয় যে জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করা হলো এবং ১৯৭৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের পূর্বেই জাতীয় সংসদের নির্বাচন হবে।
এর পরের ঘটনাপ্রবাহ লক্ষ করা যাক। ১৯৭৬ সালের ২৮ জুলাই প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক কর্তৃক ‘রাজনৈতিক দলবিধি’ জারি করা হয় এবং আগস্ট মাস থেকে ঘরোয়া রাজনীতির অনুমতি দেওয়া হয়। এই রাজনৈতিক দলবিধির শর্তগুলো পূরণ করে ৫৬টি দল তাদের অনুমোদনের জন্য আবেদন করে। কিন্তু আবেদনকারী অধিকাংশ দলকে অনুমোদন না দিয়ে রাষ্ট্রপতির অগোচরে পর্দার আড়ালে খেলা শুরু হয়। যেসব দল জাতীয় সংসদের নির্বাচন স্থগিত রাখার পক্ষে বিবৃতি দিতে সম্মত হয়, পুনর্বিবেচনায় তাদের অনুমোদন দেওয়া হয়। রাজনৈতিক দলগুলো সেমত বিবৃতি দেওয়ায় রাষ্ট্রপতি সায়েমকে নির্বাচন স্থগিত করার আদেশ দিতে বাধ্য করা হয়।
২৯ নভেম্বর সায়েম প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব মেজর জেনারেল জিয়াকে দেন। অতঃপর পাঁচ মাস পরে সায়েম পদত্যাগ করেন ও জিয়া রাষ্ট্রপতি হন। ঘটনাটি সায়েমের কথায় বলছি : ‘২১ শে এপ্রিল, ১৯৭৭ দিনটিতে উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজন প্রবীণ সদস্য আমার বিশেষ সহকারীর নেতৃত্বে আমার কাছে আসেন এই অনুরোধ করতে, যেন আমি রাষ্ট্রপতির পদ ত্যাগ করি। তাঁরা বলেন যে, সেনা প্রধান ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের অধীনে তাঁরা দায়িত্ব পালন করতে চান। এর দ্বারা কি এটাই সঙ্ষ্টত প্রমাণিত হয় না যে, বেসামরিক ব্যক্তিরা এমনকি পদে কর্মরত থাকা সত্ত্বেও সেনাবাহিনীর অধীনে কাজ করতে চান? তত্ক্ষণাত্, তবে আপাতত, আমি পদত্যাগে সম্মত হলাম... রাষ্ট্রপ্রধানের পদ ছেড়ে দেওয়ার পূর্বে আমি জিয়াকে বলি যে, আমি ইতিপূর্বে নির্বাচনগুলি করতে পারিনি, আমি তাকে অনুরোধ করব ঐগুলি সমঙ্ন্ন করতে। তিনি আমাকে আশ্বস্ত করেন যে, তিনি নির্বাচনগুলি করবেন। এটা আমাকে সুখী করে। আমি অবশ্য তখন নির্বাচনগুলিতে তাঁর নিজের অংশগ্রহণ চিন্তা করতে পারিনি।’
এরপর আরো অনেক বছর কেটে গেছে। বাংলাদেশের দুঃখের বিচার আজো হয়নি।
তথ্যসূত্র
১. বাঙালীর ইতিহাস : আদিপর্ব/নীহাররঞ্জন রায়
২. মূলধারা ’৭১/মঈদুল হাসান
৩. মংরাজার মুক্তিযুদ্ধ/লে. কর্নেল নুরুন্নবী খান বীরবিক্রম
৪. বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দশম খণ্ড/বাংলাদেশ সরকার, তথ্য মন্ত্রণালয়
৫. অঃ ইধহমধনযধনধহ : খধংঃ চযধংব/অনঁ ঝধফধঃ গ. ঝধুবস
সূত্র: ২৬ মার্চ ২০০৩ প্রথম আলোর "স্বাধীনতা দিবস" বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত