বিজ্ঞাপন
default-image

ঘুম ভাঙলো পাখিদের প্রলম্বিত ডাকে।

শুধু কি কোকিল-পাখি নাকি?

গ্রামে কত রকমের পাখিরা যে থাকে।

অচেনা-অজানা সেই ব্রাত্য-পাখিদের

প্রভাত-কাঁপানো কিচিরমিচির ধ্বনি

শুনে মনে হলো, বধিরও হতাম যদি

আমার এই সুখনিদ্রা ভাঙতো তখনই।

আমি দ্রুত শয্যা ছেড়ে বেরিয়ে এলাম।

নবীন পত্রপল্লবশোভিত সবুজ বৃক্ষদল

মুহূর্তে কবির চিত্ত করিল দখল—।

মনে হলো অবশেষে আমার গ্রামটিকে

আমি ভালোবেসে ফিরিয়া পেলাম।

আলপথে, প্রাতঃকৃত্যে, গহন জঙ্গলে

এবং শুকিয়ে-আসা পুকুরের জলে

শীতের অপস্রিয়মাণ কুয়াশা তখনও

লেপ্টে আছে শেষ-বসন্তের গায়ে।

তাকে উড়িয়ে নিচ্ছে দক্ষিণের হাওয়া।

আমি কি এখনও সেই সুদূর প্যারিসে

শেন নদীর বাঁধানো তীর ধরে হাঁটছি?

হঠাত্ পাখিদের গান বন্ধ হয়ে গেলো।

না কোকিল, না ঐ ব্রাত্য-পাখির দল,

কারও কণ্ঠে গানের টু শব্দটিও নেই—।

গ্রীষ্ম আসার আগেই এ কোন বিপর্যয়?

আমি বটবৃক্ষতলে দাঁড়িয়ে শুধালাম,

হে ঘুমভাঙানিয়া পাখিরা আমার—

বড় দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে

আমি তোমাদের গান শুনতে এসেছি...

তোমরা গান থামিয়ে দিলে কেন?

গাও, গাও, পরান উজাড় ক’রে গাও।

আমাকে শোনাও জর্জ হ্যারিসন,

আমাকে শোনাও রবিশংকর,

আমাকে শোনাও মুক্তিযুদ্ধের গান।

মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যেতে যেতে

তখন একটি কালো কোকিল বললো...,

যা বললো, যদি আমিও তা বলি, তবে

আমার এই কবিতাটি আপাতত জানি

মুদ্রিত হবে না কোনো ভদ্র-পত্রিকায়।

তারচে বরং এসো পাখিগ্রামে বসে

পাঠ করি রুশো আর ফরাসি বিপ্লব।

সূত্র: ২৬ মার্চ ২০০৮ প্রথম আলোর "স্বাধীনতা দিবস" বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত