বিজ্ঞাপন
default-image

আমাদের ব্যবস্থা অনুযায়ী নিয়াজিকে ঢাকা এয়ারপোর্টে আমার আগমনের জন্য অপেক্ষা করতে বলা হলো এবং সেখানেই আত্মসমর্পণ কাগজে সই করার ব্যবস্থা করা হয়। আমি এই প্রস্তাবটি নাকচ করে দিলাম। আমি বললাম, এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এটা যত বেশি সম্ভব লোকের সামনে অনুষ্ঠান করা উচিত। আমি ঢাকার রেসকোর্স ময়দানকে ভেন্যু হিসেবে পছন্দ করলাম।

১৬ ডিসেম্বর নয়টার সময় আমি নিয়াজির কাছ থেকে একটি মেসেজ পেলাম যে ঢাকার ওপর বোমাবর্ষণ যেন ওই দিন তিনটা পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয় এবং একজন স্টাফ অফিসারকে যেন ঢাকায় পাঠানো হয় আত্মসমর্পণের বিষয়াদি চূড়ান্ত করার জন্য। আমি তখন স্টাফ অফিসারদের নিয়ে কনফারেন্স করছিলাম। আমি অফিসারদের বললাম, বন্ধুরা, যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে, আমরা জিতে গেছি। ...আমি দিল্লিতে ফোন করে জেনারেল মানেকশকে সবকিছু জানালাম। আমরা তাড়াতাড়ি আত্মসমর্পণের শর্তাবলির একটি খসড়া তৈরি করলাম এবং টেলেক্স করে দিল্লিতে পাঠালাম তা অনুমোদনের জন্য।...

আমার পরবর্তী সমস্যা ছিল, কীভাবে ঢাকায় পৌঁছাব। ঢাকার এয়ারপোর্ট বোমাবর্ষণে ক্ষত-বিক্ষত, এমনকি ক্ষুদ্রাকার প্লেন নিয়েও অবতরণ সম্ভব ছিল না। যাক, আমি আকাশপথে আগরতলা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমার সঙ্গে নিলাম আমাদের নেভি এবং এয়ারফোর্স কমান্ডার, ভাইস অ্যাডমিরাল কৃষ্ণণ ও এয়ার মার্শাল দেওয়ান, আমার স্ত্রী এবং একজন বাংলাদেশি ফৌজ। হেডকোয়ার্টারের প্রতিনিধি দুর্ভাগ্যবশত কর্নেল ওসমানী তখন হেডকোয়ার্টারের বাইরে ছিলেন।

ঢাকা এয়ারপোর্টে জেনারেল নিয়াজি ও জেনারেল জ্যাকব আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ...একজন সাংবাদিক সরাসরি জিজ্ঞেস করলেন, নিয়াজির সঙ্গে আত্মসমর্পণের শর্তাবলি নিয়ে কোনো অসুবিধা হয়েছিল কি না। আমি সকৌতুকে জবাব দিলাম, না, তারা আমাকে একটি শব্দও পরিবর্তন করার সুযোগ দেয়নি।...

আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান যথারীতি রমনা রেসকোর্স ময়দানে অনুষ্ঠিত হলো। বিপুলসংখ্যক জনতা এই আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান দেখল। বেশ কিছু মহিলাও উপস্থিত ছিলেন। আমার স্ত্রীকে জানানো হলো, বহুদিন পর এই প্রথমবার মহিলারা বাইরে আসতে সাহস করলেন। জেনারেল নিয়াজি আত্মসমর্পণ দলিলের শর্তগুলো পড়ে দস্তখত করলেন, আমিও দস্তখত করলাম। এরপর তিনি উঠে দাঁড়ালেন এবং তাঁর পিস্তল থেকে সবগুলো তাজা গুলি বের করে পিস্তলটি আমার হাতে সমর্পণ করলেন।

ভোরের কাগজ, ১৬ ডিসেম্বর ১৯৯৫

সূত্র: ২৬ মার্চ ২০১১ প্রথম আলোর "স্বাধীনতা দিবস" বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত