বিজ্ঞাপন
default-image

এখানে এক বক্তৃতায় ‘বিদ্রোহী’ বা ‘বিদ্রোহী বাহিনী’ অভিধা দুটি ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু বিদ্রোহ এবং বিদ্রোহী বাহিনীর অস্তিত্ব কে নির্ণয় করেছে? এ বিষয়ে সঠিক ধারণা পেতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের ভাষ্য শোনা নিরাপত্তা পরিষদের জন্য ভালো হবে। পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে সাত কোটি মানুষের, স্বদেশ ছেড়ে যে এক কোটি মানুষ প্রতিবেশী দেশে শরণার্থী হয়েছে, তাদের প্রতিনিধির কথা বলছি। অসহনীয়, অবিশ্বাস্য যন্ত্রণার ভেতর বসবাসরত এসব মানুষের প্রতিনিধিদের বক্তব্য নিরাপত্তা পরিষদের সভায় না শুনে এদের গায়ে ‘বিদ্রোহী’ তকমা এঁটে দেওয়াটা—নরম ভাষায় যদি বলি—হবে অকালীন।

তা ছাড়া, পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ সংসদীয় নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে—৩১৩টি আসনের মধ্যে তারা পেয়েছে ১৬৭টি। এ কথাটা সারা দুনিয়া জানে। যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমেও খবরটি প্রচারিত হয়েছে। কিন্তু এই সংখ্যাগরিষ্ঠ দলটির বিরুদ্ধে সামরিক কতৃ‌র্পক্ষের কিছু পদক্ষেপের ফলে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, যার স্বীকৃতি আসলে নিরাপত্তা পরিষদের এক দাপ্তরিক দলিলে প্রদান করা হয়েছে। এ কথা আমি আগেও বলেছি। নিরাপত্তা পরিষদের নয় সদস্য এতে স্বাক্ষর করেছেন। যাঁরা এখন বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের কথা শুনতে আপত্তি জানান, তাঁরাও তাতে স্বাক্ষর করেছিলেন। সাম্প্রতিক অবনতিশীল পরিস্থিতির কথা তাঁরা আনুষ্ঠানিকভাবেই স্বীকার করেছেন। সেই পরিস্থিতিটা কী? সেই পরিস্থিতিটা কোথায়?

আমরা যদি ‘উটপাখির নীতি’ অনুসরণের সিদ্ধান্ত নিই আর বালুতে মাথা গুঁজে রাখি, তাহলে এটা নিয়ে ভাবনা এড়িয়ে যেতে পারি। কিন্তু যদি আমরা নজর দিই বাস্তবতার ওপর, সত্যিকারের পরিস্থিতির ওপর, তাহলে এই অবনতিশীল পরিস্থিতি, যা নিরাপত্তা পরিষদের নয় সদস্য ইতিমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেছেন এবং যা এখন দুই রাষ্ট্রের মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষের দিকে নিয়ে গেছে, তার কারণ অনেক পরিষ্কার হয়ে ওঠে। এই হলো সত্যি—সেটাই পরিস্থিতির বাস্তবতা। এই পরিস্থিতিতে আমরা এই বাস্তবতাকে নানাভাবে দেখতে পারতাম। আমরা বলতে পারতাম বিদ্রোহ, বিদ্রোহী বা বিদ্রোহী বাহিনীর কথা। কিন্তু এই পরিস্থিতির আরও একটা প্রত্যয় আছে, যা জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠনগুলোর কাজকর্মে আকছার উঠে আসে। তার নাম জাতীয় মুক্তিবাহিনী ও জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম। এসব প্রশ্নের নানা রকম সম্ভাব্য ব্যাখ্যা ও পথ রয়েছে।

সূত্র: একাত্তরের ৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘে সোভিয়েত প্রতিনিধি ইয়াকভ মালিকের দেওয়া ভাষণের অংশবিশেষ

সূত্র: ২৬ মার্চ ২০১১ প্রথম আলোর "স্বাধীনতা দিবস" বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত