আমি মনে করি, মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়াটা বর্তমান সরকারের একটি ভুল উদ্যোগ। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কারা বিবেচিত হবেন, তা প্রথম নির্ধারিত হয় ১৯৭২ সালে। সরকারের উচিত ওই নির্দেশনা অনুসরণ করে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা চূড়ান্ত করা। এভাবে একের পর এক তালিকা আর মুক্তিযোদ্ধাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর কারণেই সারা দেশে এত বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে। তালিকাভুক্তির জন্য এই যে নতুন ১ লাখ মুক্তিযোদ্ধার নামের সুপারিশ এসেছে, আমি তো মনে করি এর বেশির ভাগই সঠিক নয়। বারবার তালিকা বদল হচ্ছে রাজনৈতিক স্বার্থে।
মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও এখন সনদ সংগ্রহ করে সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার হিড়িক পড়েছে। মুক্তিযোদ্ধারা যখন মুক্তিযুদ্ধে গেছেন, তখন কোনো কিছু আশা করে যাননি, এটাই তাঁদের মহত্ত্ব। সরকার যদি এখন ঘোষণা দেয় মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়তি সুবিধা দেওয়া হবে না, তাহলে কাল থেকে আর কেউ মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম তুলতে চাইবেন না। মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিরা কেন এই সুবিধা পাবেন? এসব বন্ধ করা উচিত। আর কোনো তালিকা করা উচিত হবে না। নইলে এই অবিচার চলতেই থাকবে। এসব করে মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা হচ্ছে, যা আমরা চাই না।
তালিকা হওয়া উচিত ছিল রাজাকারদের। পৃথিবীর কোনো দেশে যাঁরা যুদ্ধ করেছেন তাঁদের তালিকা করা হয়নি। বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করা হয়েছে। আমার কাছে প্রতিদিন অনেক মানুষ অভিযোগ নিয়ে আসছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়ে গেছে। অর্থ লেনদেনসহ নানা অভিযোগ উঠছে। কেউ কেউ ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। মুক্তিযোদ্ধার নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে মন্ত্রী, সাংসদেরা সুপারিশ করেছেন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সব সময় সম্মান করে আসছি। এখন সংকীর্ণ অর্থে এ শব্দটি ব্যবহার হচ্ছে। আমরা মনে করেছিলাম মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় মুক্তিযুদ্ধের সামগ্রিক বিষয়গুলো দেখবে, কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে এ মন্ত্রণালয়টি শুধু মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রণয়নের জন্য কাজ করছে।
সূত্র: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ৫ আশ্বিন ১৪২৪, বুধবার, প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।