বিজ্ঞাপন
default-image

দেশের ১০টি জেলায় অনুসন্ধান চালিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা, বধ্যভূমি, গণকবর ও নির্যাতন কেন্দ্রের নতুন নতুন স্থানের সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব স্থানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা মিলে বাঙালিদের নির্যাতন ও হত্যা করেছে। অনুসন্ধান চালানো ১০টি জেলায় এ রকম নতুন ২ হাজার ৪৫২টি স্থান মিলেছে। ‘গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রে’র সহায়তায় চালানো গবেষণায় তৃণমূল গবেষকেরা এই দাবি করেছেন।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান হলে আয়োজিত সেমিনারে এ তথ্য জানানো হয়।

অনুসন্ধান চালানো ১০ জেলার মধ্যে নীলফামারীতে ৮৫টি, বগুড়ায় ১৩৯টি, নাটোরে ১২৬টি, কুড়িগ্রামে ৮৪টি, পাবনায় ১২৬টি, রাজশাহীতে ২৬৩টি, সাতক্ষীরায় ৪১টি, নারায়ণগঞ্জে ২৮৮টি, ভোলায় ৭৪টি ও খুলনায় ১ হাজার ১২৭টি বধ্যভূমি, গণকবর ও নির্যাতনকেন্দ্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। জেলাগুলোতে নতুন আবিষ্কৃত বধ্যভূমি ২০৪টি, গণহত্যা হয়েছে এমন স্থান ১ হাজার ৭৫২টি, গণকবরের সংখ্যা মিলেছে ১৫১। আর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা নির্যাতনের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করেছিল এমন স্থান মিলেছে ৬৭৮টি।

নীলফামারী ও বগুড়ায় গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আহম্মেদ শরীফ, নাটোরে সুমা কর্মকার, কুড়িগ্রামে আক্তার বানু, পাবনাতে রোকনুজ্জামান বাবলু ও শিউলি খাতুন, রাজশাহীতে মাহবুবর রহমান ও হাসিনা শারমিন, সাতক্ষীরায় ফাহিমা খাতুন, নারায়ণগঞ্জে রীতা ভৌমিক, ভোলায় রেহানা পারভীন ও খুলনায় অমল কুমার গাইন।

দিনব্যাপী সেমিনারের প্রথম অধিবেশন শুরু হয় সকালে। এ অধিবেশনে বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, শিল্পী হাশেম খান ও শাহরিয়ার কবির। এর আগে সেমিনারের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।

দ্বিতীয় অধিবেশনে গবেষকদের মধ্যে বক্তব্য দেন রিতা ভৌমিক, ফাহিমা খাতুন, নূরুজ্জামান, আক্তার বানু প্রমুখ। গবেষকেরা বলেন, স্বাধীনতাসংগ্রামের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা গণহত্যা, নির্যাতন করেছে এ দেশের মানুষের ওপর। সেসব স্থান সংরক্ষিত করা হয়নি। এসব বহু স্থানের ওপরই এখন বিপণিবিতান গড়ে উঠেছে। এসব জায়গা অবিলম্বে চিহ্নিত করে তা রক্ষার আহ্বান জানান তাঁরা।

লে. কর্নেল (অব.) সাজ্জাদ আলী জহির (বীর প্রতীক) বলেন, এই গবেষকদের বড় অংশ নারী। দেশের নারীরা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এ রকম অসম্ভব একটি গবেষণা করেছেন, তা সত্যি বিস্ময়ের। এটি বাংলাদেশের সমাজের জন্যও ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেন তিনি।

অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, দেশের উন্নয়ন হচ্ছে, তবে অধিকারের উন্নয়ন হচ্ছে না। যাঁরা মুক্তিযোদ্ধা, তাঁরা সাহসী ছিলেন বলেই দেশ স্বাধীন হয়েছে। নতুন যুগের মুক্তিযোদ্ধাদেরও সাহসী হতে হবে। তিনি আরও বলেন, নতুন করে আবিষ্কৃত এই গণহত্যার তথ্য এখন থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হবে।