জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক ছবির স্বত্ব কোনো ব্যক্তি দাবি করতে পারবেন না বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, এসব রাষ্ট্রের সম্পত্তি। বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার এক রিট পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে এ রায় দেন। তবে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক ছবি কেউ ব্যবহার করতে চাইলে, সে ক্ষেত্রে সূত্র উল্লেখ করে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করার বিষয়টিও রায়ে এসেছে।
গত বছরের ৩১ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক ওই রিট করেন। রিটে বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা ও ৩০৫৩ দিন—এই দুটি বইয়ের গ্রন্থস্বত্ব ও মেধাস্বত্বের ক্ষেত্রে অনিয়মের চেষ্টা হয়েছে এমন অভিযোগে এনে বিষয়টি তদন্তে নির্দেশনা চাওয়া হয়।
প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রুল দিয়ে অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়ে প্রতিবেদন দিতে বলেন। আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু কর্নারের জন্য প্রকাশিত বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা বইয়ের গ্রন্থস্বত্ব মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এবং ৩০৫৩ দিন বইটির গ্রন্থস্বত্ব বাংলাদেশ জেলের (কারাগার) কাছে থাকাই বাঞ্ছনীয়। এরপর রুলের ওপর শুনানি নিয়ে গতকাল রায় দেওয়া হয়।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী অনীক আর হক। বই দুটির প্রকাশক জার্নি মাল্টিমিডিয়ার প্রধান গবেষক নাজমুল হোসেনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক, সঙ্গে ছিলেন এম হারুনুর রশীদ খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত।
আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও মুক্তিযুদ্ধ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে বইয়ের জন্য যেসব ছবি নেওয়া হয়েছে, তা জার্নি মাল্টিমিডিয়া দাবি করতে পারবে না। তবে বইয়ের কপিরাইট প্রকাশনীর থাকবে। বঙ্গবন্ধু, তাঁর পরিবারসংক্রান্ত ও স্বাধীনতার যুদ্ধকালীন ছবি দিয়ে যত বই সম্পাদনা ও প্রকাশিত হবে—এর কপিরাইট রাষ্ট্রের থাকবে। এসব ছবি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দাবি করতে পারবে না বলে রায়ে বলা হয়েছে। তবে ওই ছবি দিয়ে যখন বই সম্পাদনা বা প্রকাশিত হবে, তখন ওই বইয়ের কপিরাইট সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির থাকবে।
মুজিব বর্ষ উপলক্ষে ওই দুটি বই ছাপানো হয়েছে। এর কার্যক্রম ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে শেষ করতে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানান শাহ মঞ্জুরুল হক। তিনি বলেন, পরবর্তী সময়ে প্রকাশিত বইয়ে ছবি সংগ্রহের সূত্র উল্লেখ করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের কথা রায়ে বলা হয়েছে।
তবে রিট আবেদনকারীর আইনজীবী অনীক আর হক প্রথম আলোকে বলেন, জার্নি মাল্টিমিডিয়া যে বইগুলো ইতিমধ্যে প্রকাশ করেছে, সেগুলো সংগ্রহ করে প্রতিটি বইয়ে যেসব ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, তার স্বত্ব প্রকাশকের নয়—এই কথা লিখে দিতে হবে। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক ছবি কেউ ব্যবহার করতে চাইলে, সে ক্ষেত্রে সূত্র উল্লেখ করে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে হবে বলে রায়ের পর্যবেক্ষণে এসেছে।