বিজ্ঞাপন

প্রকৌশলী,পাবনা

default-image

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী একাত্তরের ২৫ মার্চ গণহত্যা শুরু করলে পাবনা শহরের একদল সাহসী তরুণ, বাঙালি পুলিশ ও ইপিআর সদস্য মিলে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। এই মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ছিলেন শহীদ প্রকৌশলী মোকাররম হোসেন। তাঁরা পাঁচ ভাই, এক ভগ্নিপতিসহ ছয়জন মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন। শহীদ হয়েছেন চার ভাই, ভগ্নিপতিসহ পাঁচজন।

শহীদ মোকাররম হোসেনের বাড়ি পাবনা শহরের সাধুপাড়া মহল্লায়। বাবা মোতাহার হোসেন ছিলেন পাবনা আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক, মা রোকেয়া বেগম গৃহবধূ। মোকাররম হোসেনরা সাত ভাই ও দুই বোন। তিনি দ্বিতীয়। মোকাররম কর্মজীবন শুরু করেছিলেন পাবনা জেলা বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী হিসেবে।

পাবনা শহর ১০ দিন শত্রুমুক্ত রেখেছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। এরপর হানাদারেরা একসঙ্গে বিমান হামলা এবং ভারী অস্ত্র ও বিপুলসংখ্যক সেনা নিয়ে শহরে আক্রমণ চালায়। উভয়মুখী হামলায় মুক্তিযোদ্ধারা শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ টিকিয়ে রাখতে পারেননি। তাঁরা যে যাঁর মতো সরে গিয়ে বিভিন্ন সেক্টরে যুদ্ধে অংশ নেন।

মোকাররম হোসেনের বড় ভাই মোজাম্মেল হোসেন ছিলেন সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে ৭ নম্বর সেক্টরের কমান্ডিং অফিসার হিসেবে কাজ করছিলেন। ঢাকার মগবাজারের মধুবাগে ছিল তাঁর বাসা। মূলত তাঁর প্রেরণাতেই ছোট চার ভাই ও ভগ্নিপতি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। পাবনা শহরে পাকিস্তানি সেনারা প্রবেশ করলে তাঁরা সবাই ঢাকায় গিয়ে গেরিলাযুদ্ধে অংশ নেন। তাঁর বাবা-মা ও পরিবারের অন্য সদস্যরাও পাবনা থেকে পালিয়ে ঢাকায় এসে মধুবাগের বাসায় আশ্রয় নেন।

বিজয়ের একেবারে দ্বারপ্রান্তে ১০ ডিসেম্বর মোকাররম হোসেন, তাঁর ছোট ভাই পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (ওয়াপদা) হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মনসুর হোসেন ও ভগ্নিপতি স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের কর্মকর্তা ইউসুফ আলী—এই তিন মুক্তিযোদ্ধা মধুবাগের বাসায় এসেছিলেন মা-বাবার সঙ্গে দেখা করতে। এর আগেই মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের অন্য দুই ভাই পাবনা অ্যাডওয়ার্ড কলেজের স্নাতকোত্তর শেষ বর্ষের ছাত্র মোশাররফ হোসেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মোস্তাক হোসেন রূপগঞ্জে যুদ্ধে শহীদ হন।

মোকাররম হোসেনদের মধুবাগের বাসায় আসার কথা রাজাকাররা কোনোভাবে জেনে ফেলে। একাত্তরের ১২ ডিসেম্বর রাতে তারা পাকিস্তানি বর্বর সেনাদের নিয়ে এসে বাসা ঘেরাও করে। মা-বাবার সামনে থেকে মোকাররম হোসেন, তাঁর ভাই মনসুর হোসেন ও ভগ্নিপতি ইউসুফ আলীকে তুলে নিয়ে যায়। পরে তাঁদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। আগামী প্রকাশনীর শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ গ্রন্থে এই ভাইদের ও ভগ্নিপতির শহীদ হওয়ার বিবরণ রয়েছে।

পাবনার মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা বেবী ইসলাম বলেন, পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে দেশের প্রথম প্রতিরোধযুদ্ধ হয়েছিল পাবনায়। শহর ১০ দিন শত্রুমুক্ত ছিল। সে কথা অনেকেই ভুলে গেছেন। তেমনিভাবে চার ভাই, ভগ্নিপতিসহ পাঁচ শহীদের স্মরণে এখানে কিছু করা হয়নি। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে শহীদ পরিবারের মতো তাঁর কাছেও এটি দুঃখের বিষয়।

গ্রন্থনা: সরোয়ার মোর্শেদ, পাবনা