বিজ্ঞাপন
default-image

কালীপ্রসন্ন রায় ছিলেন মানুষ গড়ার কারিগর। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনসহ প্রতিটি প্রগতিশীল আন্দোলনে তিনি দৃঢ় চিত্তে সমর্থন দিয়েছেন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেওয়াসহ নানাভাবে সহযোগিতা করেন। এ কারণে তাঁকে ও তাঁর বাড়ির আরও তিনজনকে পাকিস্তানি হানাদার সেনারা নির্মমভাবে হত্যা করে।

শহীদ শিক্ষক কালীপ্রসন্ন রায় ছিলেন জমিদারের সন্তান। ১৯১৭ সালে ঢাকার ধামরাইয়ের গাঙ্গুটিয়ার জমিদারদের ঐতিহ্যবাহী ‘রায়বাড়ি’তে জন্ম তাঁর। গাঙ্গুটিয়ার জমিদারবাড়িটি মানিকগঞ্জ ও ধামরাইয়ের সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত। তাঁর বাবা জমিদার দীনবন্ধু রায় এবং মা কুমুদিনী রায়। তাঁরা ছিলেন তিন ভাই, তিন বোন। কালীপ্রসন্ন কলকাতার সরস্বতী ইনস্টিটিউট থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। এরপর তিনি খিদিরপুর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতে জাপানি সৈন্যরা বোমা ফেলায় তিনি বাড়িতে ফিরে আসেন। পরে তিনি ধামরাইয়ে কুশুরা আব্বাস আলী উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় যোগ দেন। তিনি ছিলেন গণিতের শিক্ষক।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কে তথ্য চেয়ে প্রথম আলোতে বিজ্ঞাপন ছাপা হলে মানিকগঞ্জ সদরের খাবাশপুর আদর্শ ডিগ্রি কলেজের বাংলার প্রভাষক মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর কালীপ্রসন্ন রায়ের ছবি ও তথ্য পাঠান। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে তাঁর মাঠপর্যায়ে গবেষণার তথ্য নিয়ে প্রকাশিত স্মৃতি ও শ্রুতিতে মানিকগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধ বইতে এবং আহমদ পাবলিশিং হাউস থেকে প্রকাশিত বাশার খান ও জাহিদ হাসানের লেখা ঢাকা ১৯৭১: ধামরাই গণহত্যা বইতে কালীপ্রসন্ন রায়সহ এ বাড়ির চার শহীদের নামের উল্লেখ রয়েছে।

কালীপ্রসন্ন রায়ের স্ত্রী মানময়ী রায় গত বছর ৯ এপ্রিল ৮৪ বছর বয়সে মারা যান। তাঁর বড় ছেলে রামগোপাল রায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে, মানিকগঞ্জ শহরে বসবাস করছেন। তিনি বলেন, দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর মাকে সমবেদনা জানিয়ে একটি শোকবার্তার সঙ্গে দুই হাজার টাকার অনুদান দেন। এ ছাড়া আর কোনো সুযোগ-সুবিধা পাননি। শহীদ হিসেবে তাঁর বাবা সরকারি স্বীকৃতিও পাননি।

গ্রন্থনা: আবদুল মোমিন, মানিকগঞ্জ