বিজ্ঞাপন
default-image

সাতক্ষীরা জেলা সদর থেকে ১৫-১৬ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ভোমরা। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এলাকা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ছাত্র, যুবক ও ইপিআরের সমন্বয়ে গড়া একদল প্রতিরোধযোদ্ধা অবস্থান নেন এখানে। হাসানউদ্দিন আহমেদ ছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন। তিনি ইপিআর সদস্য। এপ্রিল মাসের শেষ দিকে একদল পাকিস্তানি সেনা তাঁদের প্রতিরক্ষা অবস্থানে আক্রমণ করে। এ আক্রমণ আকস্মিক হলেও অপ্রত্যাশিত ছিল না। হাসানউদ্দিন আহমেদ ও তাঁর সহযোদ্ধারা সাহসের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ প্রতিরোধ করতে থাকেন। তাঁরা রাস্তার আড়ালে বা পরিখায় ছিলেন। পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ এত তীব্র ছিল যে গুলির মধ্যেই তারা ক্রল করে মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের কাছে চলে আসে। প্রথম দুই ঘণ্টার যুদ্ধ পাকিস্তানি সেনাদের অনুকূলে থাকে। এ সময় হাসানউদ্দিনসহ ইপিআরের কয়েকজন যথেষ্ট রণকৌশল ও বীরত্বের পরিচয় দেন। তাঁদের বীরত্বে বেশ কজন পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়। তখন পাকিস্তানি সেনারা পিছিয়ে যেতে থাকে এবং একপর্যায়ে তারা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। হাসানউদ্দিনের মুক্তিযোদ্ধা জীবনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে এটিই ছিল প্রথম প্রত্যক্ষ যুদ্ধ।

মে মাসের শেষের দিকে এক দিন ভোরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আবার ভোমরায় মুক্তিবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানে আক্রমণ করে। সেদিন হাসানউদ্দিন বাঁধের আড়ালে একটি প্রতিরক্ষা অবস্থানে ছিলেন। তাঁদের দলের কাছে ছিল একটি মেশিনগান। এর গানার ছিলেন তাঁর সহযোদ্ধা আতাউর রহমান। তিনি সেটি কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে সক্ষম হন। মেশিনগানের অবিরাম গুলিবর্ষণে পাকিস্তানি সেনাদের অগ্রাভিযান বারবার বাধাগ্রস্ত হয়। তখন পাকিস্তানি সেনারা মেশিনগান ধ্বংস করতে আর্টিলারি গোলাবর্ষণ করে। হাসানউদ্দিন আহমেদ ও তাঁর সহযোদ্ধারা বারবার অবস্থান বদল করে পাকিস্তানি সেনাদের ধোঁকা দেন। পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের ও মেশিনগানের অবস্থান নির্ণয় করতে ব্যর্থ হয়। পরে মুক্তিযোদ্ধারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ চালান। তাঁদের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গুলিতে বহু পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়। থেমে থেমে সেদিন ১৪-১৫ ঘণ্টা যুদ্ধ হয়। পাকিস্তানি সেনাদের প্রচণ্ড আক্রমণের পরও তাঁরা তাঁদের অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হন।

হাসানউদ্দিন আহমেদ ১৯৭১ সালে যশোর জেলার বেনাপোল সীমান্তে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তাঁরা প্রতিরোধযুদ্ধে যোগ দেন। পরে ভোমরা সীমান্তে অবস্থান নেন। ভোমরা প্রতিরক্ষা অবস্থানের পতন হলে তাঁরা ভারতে চলে যান। সেখানে থাকার সময় তাঁদের প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তিনি পরে সিলেটের ধলই বিওপি (২৮ অক্টোবর) ও কানাইঘাট (২২ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর) আক্রমণে অংশ নেন।

১৯৮৪ সালে বিডিআরের চাকরি থেকে তিনি অবসর নেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান