বিজ্ঞাপন
default-image

রাতের অন্ধকারে সীমান্ত এলাকা থেকে জিপে করে বাংলাদেশের ভেতরে এলেন হারেছ উদ্দীন সরকার, ক্যাপ্টেন মতিউর রহমান (বীর বিক্রম, পরে লেফটেন্যান্ট কর্নেল), নজরুল ইসলাম, মনসুর আলী, আফজাল হোসেন, শওকত আলীসহ ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা। গাড়ির হেডলাইট নেভানো। পথে আছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সতর্ক প্রহরা। সেই প্রখর প্রহরা ফাঁকি দিয়ে তাঁরা পৌঁছালেন লক্ষ্যস্থল বড়খাতা তিস্তা রেলসেতুর অদূরে। সেখান থেকে রেলসেতুর দূরত্ব দুই মাইল। তাঁদের সঙ্গে আছে বিস্ফোরক, ডেটোনেটর এবং একটি হালকা মেশিনগান ও তিনটি সাবমেশিন কারবাইন বা স্টেনগান; আর মাত্র একটি তিন ইঞ্চি মর্টার। তাঁরা তিস্তা রেলসেতু ধ্বংস করবেন। এর আগে তিনবার এ অভিযান ব্যর্থ হয়েছে। এবার তাঁদের সফল হতেই হবে। সেদিন পরিস্থিতি তাঁদের কিছুটা সহায় হলো। হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলো। এ সুযোগে তাঁরা সেতুতে বিস্ফোরক স্থাপন করলেন। নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ করে ডেটোনেটরে আগুন লাগিয়ে দূরে অবস্থান নিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে প্রচণ্ড শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে উঠল। মনে হলো, আকাশ ভেঙে একের পর এক বজ্রপাত হচ্ছে বড়খাতার তিস্তা সেতুর ওপর। একই সময় পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থান লক্ষ্য করে গর্জে উঠল তাঁদের অস্ত্র। এ ঘটনা ১৯৭১ সালের ১২ আগস্টের।

বড়খাতা লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার অন্তর্গত। পাটগ্রাম থেকে রেল ও সড়কপথ বড়খাতা হয়ে জেলা সদরে এসেছে। বড়খাতায় আছে রেলসেতু। ১৯৭১ সালে সীমান্ত এলাকায় চলাচলের জন্য ওই রেলসেতু বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এ সেতু রক্ষার জন্য সেখানে নিয়োজিত ছিল এক কোম্পানি পাকিস্তানি সেনা। তাদের চলাচল ব্যাহত করতে মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকবার তিস্তা রেলসেতু ধ্বংস করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। প্রতিবারই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রবল প্রতিরোধে তাঁরা ফিরে আসতে বাধ্য হন।

একের পর এক অভিযান ব্যর্থ হওয়ার পর ৬ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক পাটগ্রাম সাব-সেক্টরের অধিনায়ক ক্যাপ্টেন মতিউর রহমান ও কোম্পানি কমান্ডার হারেছ উদ্দীন সরকারকে ডেকে অবিলম্বে সেখানে সফল অভিযান পরিচালনার জন্য বলেন। তাঁর নির্দেশে তাঁরা আগের অভিযানগুলোর ব্যর্থতা ও ভুলত্রুটি বিশ্লেষণের মাধ্যমে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করলেন।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বড়খাতার তিস্তা রেলসেতু ধ্বংসের ঘটনা উল্লেখযোগ্য।

হারেছ উদ্দীন সরকার ১৯৭১ সালে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি এতে যোগ দেন। যুদ্ধ করেন ৬ নম্বর সেক্টরের পাটগ্রাম সাব-সেক্টরের অধীনে। বেশ কয়েকটি যুদ্ধে তিনি অংশ নেন।

স্বাধীনতার পর তিনি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান