বিজ্ঞাপন
default-image

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কে কর্ণফুলী নদীর তীরে কালুরঘাট। মুক্তিযুদ্ধের সূচনায় এখানে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের একটি প্রতিরক্ষা অবস্থান। মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন কয়েকটি দলে বিভক্ত। নদীর পশ্চিম ও পূর্ব তীরের একটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন হারুন আহমেদ চৌধুরী।

চট্টগ্রাম শহর দখলের পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি বড় দল অগ্রসর হয় কালুরঘাট অভিমুখে। ১১ এপ্রিল সকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আর্টিলারি, মর্টার ও নৌবাহিনীর গান ফায়ারের সাপোর্ট নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ শুরু করে। পাকিস্তানি আক্রমণ ছিল অত্যন্ত পরিকল্পিত, ব্যাপক ও সুবিন্যস্ত। সম্মুখভাগে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা প্রবল আক্রমণে বিপর্যস্ত হয়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। আক্রমণের তীব্রতায় তাঁরা পেছনে কালুরঘাট সেতুতে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো খবর দিতে পারেননি।

এরপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দ্রুত অগ্রসর হয় সেতুর দিকে। হারুন আহমেদ চৌধুরী তাঁর দল নিয়ে ছিলেন সেতু এলাকায়। তাঁরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আকস্মিক আক্রমণের শিকার হন। একদম কাছাকাছি দূরত্বে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।

হারুন আহমেদ চৌধুরী কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে সেতুর পশ্চিম প্রান্তে ডান দিকে ছিলেন। এ সময় তিনি প্রতিরক্ষা অবস্থান ছেড়ে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছিলেন। তখন হঠাত্ তাঁর একেবারে সামনে পাকিস্তানি সেনারা দৃশ্যমান হয়। ভয়াবহ এক পরিস্থিতি।

মুক্তিযোদ্ধা সেখানে মাত্র ৩৫ জন। অন্যদিকে পাকিস্তানি সেনা কমপক্ষে ১০০ জন। হারুন আহমেদ চৌধুরী বিচলিত হলেন না। সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে থাকলেন। কিন্তু বেশিক্ষণ পারলেন না। পাকিস্তানি সেনাদের ছোড়া একটি গুলি এসে লাগল তাঁর পেটে। সেতুর ওপর তিনি লুটিয়ে পড়েন।

হারুন আহমেদ চৌধুরী সৌভাগ্যক্রমে সেদিন বেঁচে যান। গোলাগুলির মধ্যেই তাঁর দুই সহযোদ্ধা—লেফটেন্যান্ট এ ওয়াই এম মাহফুজুর রহমান (বীর বিক্রম, পরে মেজর এবং ১৯৮১ সালে জিয়া হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ও দণ্ডিত) ও মুক্তিযোদ্ধা হাশমি মোস্তফা (তখন ছাত্র, পরে মেজর) তাঁকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নেন।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন হারুন আহমেদ চৌধুরী প্রেষণে ইপিআরে ছিলেন। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন চট্টগ্রাম ইপিআর সেক্টরের অধীন ১৭ নম্বর উইংয়ের (বর্তমানে ব্যাটালিয়ন) সহ-উইং কমান্ডার হিসেবে। এর অবস্থান ছিল কাপ্তাইয়ে। ২৫ মার্চ রাতেই ১৭ উইংয়ে কর্মরত বাঙালি ইপিআর সদস্যরা তাঁর নেতৃত্বে বিদ্রোহ করে কালুরঘাটে সমবেত হন।

কালুরঘাট যুদ্ধে আহত হারুন আহমেদ চৌধুরীকে প্রথমে পটিয়ায়, পরে কক্সবাজার জেলার উখিয়াতে নেওয়া হয়। এর পর তিনি মিয়ানমারে যান। মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে ১ নম্বর সেক্টরে যোগ দেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান