বিজ্ঞাপন
default-image

পাকিস্তানি সেনারা গুলির আওতায় আসামাত্র গর্জে উঠল হাবিবুর রহমানের অস্ত্র। তাঁর সহযোদ্ধাদের অস্ত্রও একসঙ্গে গর্জে উঠল। আকস্মিক আক্রমণে হকচকিত পাকিস্তানি সেনারা। তবে দ্রুতই তারা এ অবস্থা কাটিয়ে পাল্টা আক্রমণ শুরু করল। শুরু হলো দুই পক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ। গোলাগুলিতে পুরো এলাকা তখন প্রকম্পিত। হাবিবুর রহমান লড়াই করে চলেছেন। হঠাৎ পাকিস্তানি সেনাদের কয়েকটি গুলি এসে লাগে তাঁর শরীরে। কিছুক্ষণের মধ্যেই নিভে যায় তাঁর জীবনপ্রদীপ। এ ঘটনা ঘটেছিল শেরপুর গ্রামে ১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বরে।

শেরপুর গ্রামটি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার অন্তর্গত। সেপ্টেম্বরের পর মুক্তিযোদ্ধারা ভারত থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে বৃহত্তর কুষ্টিয়া অঞ্চলে একের পর এক গেরিলা অপারেশন চালাতে থাকেন। অবস্থানগত কারণে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের বিভিন্ন জায়গায় ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের গোপন অস্থায়ী ক্যাম্প। মুক্তিযোদ্ধারা এসব ক্যাম্পে অবস্থান করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগী রাজাকারদের ওপর প্রায়ই ঝটিকা আক্রমণ চালাতেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২৬ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ছোট দল শেরপুরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর টহল দলের ওপর আকস্মিক আক্রমণ চালায়।

মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে অ্যামবুশ পেতে অপেক্ষা করছিলেন। পাকিস্তানি সেনারা অ্যামবুশের মধ্যে আসামাত্র মুক্তিযোদ্ধারা একযোগে গুলি চালাতে শুরু করেন। আকস্মিক আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা প্রথম হকচকিত হয়ে পড়ে। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই সুবিধাজনক অবস্থান নিয়ে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। দুই দলের মধ্যে অনেকক্ষণ যুদ্ধ চলে।

মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন সংখ্যায় কম। উন্নত অস্ত্রশস্ত্রও তেমন ছিল না। অন্যদিকে পাকিস্তানি সেনারা ছিল ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত। যুদ্ধের একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনারা বেপরোয়াভাবে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। তখন মুক্তিযোদ্ধারা কিছুটা বেকায়দায় পড়ে যান। এমন অবস্থায় হাবিবুর রহমানসহ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনাদের মোকাবিলা করছিলেন। একসময় পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের তীব্রতা কিছুটা কমে যায়। পরিস্থিতি যখন মুক্তিযোদ্ধাদের অনুকূলে, ঠিক তখনই হঠাৎ গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন হাবিবুর রহমান। পাকিস্তানি সেনাদের হাতে ধরা পড়েন তাঁর এক সহযোদ্ধা। পরে গ্রামবাসী তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে সমাহিত করেন। শেরপুর ছিল হাবিবুর রহমানের নিজের গ্রাম।

হাবিবুর রহমান ১৯৭১ সালে দৌলতপুর উপজেলার বাড়াগাংদিয়া হাইস্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে জুনের প্রথম দিকে তিনি ভারতে গিয়ে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন। প্রশিক্ষণ শেষে যুদ্ধ করেন ৮ নম্বর সেক্টরের শিকারপুর সাব-সেক্টরের অধীনে। কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর, মিরপুর ও গাংনী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে তিনি গেরিলাযুদ্ধ করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান