বিজ্ঞাপন
default-image

রাতের অন্ধকারে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি দল অবস্থান নিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানের চারদিকে। মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দলে আছেন সিরাজুল হক। সকাল থেকেই তাঁদের ওপর শুরু হলো পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বোমাবর্ষণ। চলল সারা দিন বিরামহীনভাবে। তার পরও সিরাজুল হক ও তাঁর সহযোদ্ধারা দমে গেলেন না। সাহসের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ মোকাবিলা করলেন। একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনারা পালানোর পথ খুঁজতে লাগল। কিন্তু সে পথ রুদ্ধ। ফলে অচিরেই ভেঙে পড়ল পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিরোধ। এ ঘটনা পরশুরামে ঘটেছিল ১৯৭১ সালের ৮-১১ নভেম্বর।

পরশুরাম ফেনী জেলার অন্তর্গত। এর অবস্থান বিলুনিয়া পকেটে। ফেনীর উত্তরে ভারত সীমান্তে বিলুনিয়া। উত্তর-দক্ষিণে এলাকাটি প্রায় ১৬ মাইল এবং পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ছয় মাইলজুড়ে বিস্তৃত। এর তিন দিকেই ভারত। ১৯৭১ সালে বিলুনিয়া পকেটের বিভিন্ন জায়গায় ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত প্রতিরক্ষা অবস্থান।

নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে মুক্তিযোদ্ধারা বিলুনিয়া পকেটে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের অবরোধ করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতি টের পেয়ে ৯ নভেম্বর থেকে পাকিস্তানি সেনারা বোমাবর্ষণ শুরু করে। সারা দিন তাদের বোমাবর্ষণ অব্যাহত থাকে। দুপুরের পর পাকিস্তানি সেনারা শুরু করে সরাসরি আক্রমণ। মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ সাহসের সঙ্গে প্রতিহত করেন। এ সময় পরশুরামে ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে সিরাজুল হক ও তাঁর সহযোদ্ধারা বীরত্বের পরিচয় দেন। তাঁদের বীরত্বে পাকিস্তানি সেনাদের মনোবল ভেঙে পড়ে। এরপর পাকিস্তানি সেনারা পরশুরাম থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেন।

পরদিন ১০ নভেম্বর থেমে থেমে যুদ্ধ চলতে থাকে। রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পরশুরাম ঘাঁটির ওপর মুক্তিযোদ্ধারা প্রচণ্ড আক্রমণ চালান। এ আক্রমণে শত্রুপক্ষের বেশির ভাগ সদস্য নিহত হয়। বাকি সবাই আত্মসমর্পণ করে। সকাল হওয়ার পর সেখানে চারদিকজুড়ে বিক্ষিপ্তভাবে পাকিস্তানি সেনাদের লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। ধানখেত, বাংকার, খাল—কোথাও ফাঁকা নেই।

সিরাজুল হক চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে। কর্মরত ছিলেন তখনকার পশ্চিম পাকিস্তানে। ১৯৭১ সালের মার্চে ছুটিতে বাড়িতে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তাতে অংশ নেন। সক্রিয়ভাবে প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে যুদ্ধ করেন ২ নম্বর সেক্টরের রাজনগর সাবসেক্টরে।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান